আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে, চলছে বিশ্বজয়ী বীরদের বরণের প্রস্তুতি

আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে, চলছে বিশ্বজয়ী বীরদের বরণের প্রস্তুতি
আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে, চলছে বিশ্বজয়ী বীরদের বরণের প্রস্তুতি

রাজু আহাম্মেদ ।।

‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’ কিংবা ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ রবি ঠাকুরের এই পঙ্ক্তিমালাই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের আবহসঙ্গীত। পরাক্রমশালী ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছে যুব টাইগাররা, আট হাজার মাইল দূরের দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুম থেকে সেই আনন্দ রোববার রাতেই দাবানলের মতো মুহূর্তে ছড়িয়ে গেছে এ দেশে। আকবর আলীর দলের আনন্দ-উন্মাদনায় সঙ্গী হয়েছে গোটা জাতি।

আনন্দের ফল্গুধারা বইছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। সাবেক এবং বর্তমান ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংগঠক, কোচ এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরাও আকবরদের বিশ্বজয়ে উৎফুল্ল। ক্রিকেটামুদে বাঙালির তো আনন্দের সীমা নেই। অলিগলির চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, সর্বত্রই চলছে টাইগার যুবাদের বিশ্বজয়ের স্তুতি। হয়েছে আনন্দ মিছিল। নেচে-গেয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা মেতেছেন উন্মাতাল উদযাপনে।

রোববার রাতে তো শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থাই তৈরি হয়েছিল। পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ফাইনালটা টান টান উত্তেজনা ছড়িয়েছে, জয়ের পথে যতই এগিয়েছেন আকবর-রকিবুলরা, উত্তেজনার পারদ উর্ধ্বমুখী হয়েছে আরও। অবশেষে জয়টা যখন ধরা দিল, উত্তেজনায় চেয়ারে বসে থাকতে পারেননি সমর্থকরা। যানজটের বিরক্তি উপেক্ষা করেই একে অন্যের সঙ্গে মেতেছেন উদযাপনে। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে আকাশ-বাতাস। প্রথমবার বিশ্বজয়ের আনন্দ, সব ছিল বাঁধনহারা!

স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষায় আকবর-রকিবুলরা যখন উত্তীর্ণ, গোটা বাংলাদেশ তখন ক্রিকেট পতাকার নিচে একত্রিত। বিশ্ব শিরোপা অর্জনের গৌরব আর আনন্দে গভীর রাতেও আলোকিত ছিল বাংলাদেশ। ভক্তকুল আর ক্রিকেট বোদ্ধারা বলছেন, এই অর্জনের মাহাত্ম্যটাই অন্যরকম। জাতীয় দল যখন ম্রিয়মাণ মাঠের পারফরম্যান্স আর মাঠের বাইরের ঘটন-অঘটনে, এই অর্জন তখন নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে ক্রিকেটে। শুধু ক্রিকেটে কেন, প্রাণ ফিরিয়েছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো বলেই দিলেন, ‘এটা শুধু ক্রিকেটে নয়, ক্রীড়াঙ্গনের সব থেকে বড় অর্জন।’

সেই অর্জনের বাঁধভাঙা আনন্দ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আঙিনায় সাদা চোখে দেখা যায়নি। তবে ভেতরে ভেতরে সবাই আনন্দের চোরা স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলেন। কথোপকথনে সেটার আঁচ পাওয়া গেল। উদযাপনের কোনো কিছুই যে দৃশ্যমান ছিল না, ব্যাপারটা ঠিক এমনও নয়। দুপুরে ভূরিভোজের আয়োজন ছিল, করানো হয়েছে মিষ্টিমুখ। এর আগে-পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবিকর্তারা যখন মুখ খুললেন, আকবর-ইমনদের বীরত্বগাথার কথাই কেবল শোনা গেল। এরই মধ্যে বীর বরণের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে গেছে, সময় যে বেশি নেই। আগামীকাল সকালেই ফিরছে বিশ্বজয়ী যুবারা।

বিসিবি ঘটা করেই আকবরদের সংবর্ধনা দিতে চাইছে। তবে সেটা ক্রীড়ামোদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে। এর আগে দল ফিরলে কী করা হবে, তারই একটা ধারণা দিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, ‘তারা ১২ তারিখ সকালে আসবে। আমরা বিমানবন্দরে যাব তাদের অভ্যর্থনা জানাতে। আমরা বিশাল একটা কিছু করতে পারি সেখানে, কিন্তু ওই জায়গাটায় এমনিতেই ট্রাফিক অবস্থা খুব খারাপ। ওখানে যাত্রী আসা-যাওয়া করে। যদি বিশাল কিছু করতে চাই, ওই জায়গায়টা জ্যাম হবে। হয়তো আটকাতে পারব না। যতটুকু মিনিমাম করা যায়, ওটা করব।’

পুরস্কারেরও ব্যবস্থা থাকছে বিশ্বজয়ী বীরদের জন্য। এমন আভাস দিয়ে রাখলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান, ‘যারা ভালো করে তাদের ক্রিকেট বোর্ড সবসময় সংবর্ধনা দেয়। জাতীয় দল পেয়েছে। নারী দলও পেয়েছে। তো এরাও প্রাপ্য। কারণ এটা তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা একটি সাফল্য। আজকে আমরা বসব, তারপর প্ল্যান করব কী করা যায়।’ বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসও এমন আভাস দিয়েছেন। তিনি রীতিমতো উচ্ছ্বসিত যুবাদের সাফল্যে, ‘এটা তো ভাষায় বলা যাবে না। বিশ্বকাপ বিশ্বকাপই। এটা যুব বিশ্বকাপ হোক বা সিনিয়র বিশ্বকাপ হোক। একটা বিশ্বকাপ জেতা মানে অসম্ভব ব্যাপার। আপনি বিশ্ব পর্যায়ের একটি ট্রফি নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের জন্য।’

আনন্দটা ধরা পড়ল আকরাম খানের কণ্ঠেও, ‘আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে আমাদের প্লেয়াররা এত বড় সাফল্য পেয়েছে। বিশেষ করে, প্লেয়ারদের পারফরম্যান্স খুবই ভালো ছিল। একটি অর্জন একটি দেশকে ওপরে ওঠার সিঁড়ি তৈরি করে দেয়। এ ধরনের অর্জন আস্তে আস্তে ক্রিকেটের শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়।’ অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে আলো ছড়িয়েই জাতীয় দলে আসা তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, ‘এটা আসলে কোটি টাকার মতোই আনন্দ... তার চেয়েও বেশি। আসলে এটা প্রকাশ করার মতো না।’

এরপর সাইফউদ্দিন বললেন, ‘ক্রিকেট এমন একটা জায়গা, যেখানে জিতলে আমরা সবাই এক হয়ে যাই। সবারই ভালো লাগে। এখনও মনের ভেতর অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করছে।’ কোটি কোটি বাঙালির অভিব্যক্তিটাই যেন ধরা পড়ল সাইফউদ্দিনের এই কথায়।