কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্বা বাড়ছে চট্টগ্রামে পাড়া-মহল্লায় : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৈরি হচ্ছে তালিকা

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্বা বাড়ছে  চট্টগ্রামে পাড়া-মহল্লায় : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৈরি হচ্ছে তালিকা
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্বা বাড়ছে চট্টগ্রামে পাড়া-মহল্লায় : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৈরি হচ্ছে তালিকা

কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ব বাড়ছে চট্টগ্রামের পাড়া-মহল্লা এমনকি অলি গলিতে । এদের এই দৌরাত্ব ঠেকাতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তালিকা করে বিশেষ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে সিএমপি। পুলিশ বলছে, কিশোরদের জন্য আইন সহজ হওয়ায় কঠোর হতে পারছেন না তারা। আর আইনজীবীরা বলছেন, কিশোরদের নয়, তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে পারলেই বন্ধ হবে অপরাধ কর্মকা-। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, আইনী পদক্ষেপের বাইরে এলাকাভিত্তিক গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের সক্রিয় করতে না পারলে, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধু-সহপাঠিদের ওপর আক্রমণ কখনো সংঘবদ্ধ হয়ে এলাকায় আধিপত্য, চাঁদাবাজি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরোহ ঘটছে চট্টগ্রামে। কখনো কখনো হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে বয়সে কিশোর বা তরুণ এসব অপরাধীরা। যদিও এদেরকে মদদ দিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা কথিত বড় ভাইরা।
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ব থামাতে মাঠেনেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। থানায় থানায় তালিকাতৈরী শুরু হয়েছে, অচিরেই শুরু হবে অভিযান। সিএমপি কমিশনার বলছেন, আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে পারছে না পুলিশ। আর আইনজীবীরা বলছেন, কিশোরদের নয় তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে পারলেই অপরাধের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণেল আসবে।
তবে অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কথিত বড়ভাইরা নির্দিষ্ট কিছু এলাকাকে টার্গেট করেই অপরাধ কর্মকা-ের বিস্তৃতি ঘটায়। আইনগত সাপোর্ট দিয়ে ওইসব এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সক্রিয় করতে পারলে, সুফল আসবে। কিশোর গ্যাংয়েরহোতাদের বিরুদ্ধে অভিযানেনেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চকবাজার এলাকার কিশোর গ্যাংয়েরহোতা যুবলীগনেতা নুরমোস্তফা টিনুকেগ্রেফতার করেছে র‌্যাব। আগ্রাবাদেরখোরশেদ আলম নিহত হয়েছে কথিত ক্রসফায়ারে।
এদিকে সিএমপির তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে এসব গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে করা তালিকায় এরকম কথিত বড় ভাই রয়েছে ৪৭ জন। তারা প্রত্যেকেই একেকটি গ্যাংয়ের দলপতি ও শেল্টারদাতা। আর নগরীতে এসব গ্যাং কালচারে জড়িত কিশোরের সংখ্যা রয়েছেমোট ৫৩৫ জন। জানা যায়, ২০১৮ সালেকোতোয়ালী থানার জামালখানে আদনান হত্যার পর নগর পুলিশ অপরাধচক্রে জড়িত কিশোর এবং অপরাধপ্রবণ এলাকার তালিকা করেছিল। তালিকায় প্রায় ৫৫০ জন কিশোরের নাম এসেছিল।যেখানে নিয়মিত বসে আড্ডাদেয় সেরকম অপরাধপ্রবণ স্পটের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০টি। কোচিং ভিত্তিক, রাজনৈতিক, স্কুল-কলেজ ভিত্তিক, চাকরিজীবী এই ধরনের অন্তত ১৫টি ক্যাটাগরির আড্ডার এই ৩০০ স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন স্পটে আড্ডারত কিশোর-তরুণ দেখলে আটকের কথাও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল নগর পুলিশের পক্ষ থেকে। তবে কিছুদিন পুলিশ তৎপর থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায় পুলিশের সেই তৎপরতা।
সূত্রমতে, কিশোর গ্যাংয়ের মোট কিশোরের সংখ্যা ৫৩৫ জন। আর তাদের গ্যাংয়ের সংখ্যা ৪৭টি। তাদের নিয়ন্ত্রক কথিত বড় ভাইদেও বেশিরভাগই সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতা নামধারী। তাদেও বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পদে না থাকলেও তারা সরকার দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতাদের বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে থাকেন।
সিএমপির দক্ষিণ বিভাগের চার থানায় গ্যাং গ্রুপের মোট সংখ্যা ১৬টি আর সদস্য সংখ্যা ৩১৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিশোর অপরাধীর সংখ্যা কোতোয়ালী থানায় সদস্য সংখ্যা ১৫০ জন ও গ্রুপের সংখ্যা ৪টি। বাকলিয়া থানার গ্রুপের সংখ্যা ৩টি আর সদস্য সংখ্যা ১৮ জন। চকবাজারে গ্রুপের সংখ্যা ৭টি ও সদস্য সংখ্যা ১১৮ জন। সদরঘাট থানায় গ্রুপের সংখ্যা ২টি ও সদস্য সংখ্যা ৩০জন। একইভাবে সিএমপির উত্তর বিভাগের চার থানায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের সংখ্যা ১৩টি ও সদস্য সংখ্যা ৮৮ জন। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানায় গ্রুপের সংখ্যা ২টি ও সদস্য সংখ্যা ৩০জন। পাঁচলাইশ থানায় সদস্য সংখ্যা ১৮ জন ও গ্রুপের সংখ্যা ৩টি। খুলশী থানায় গ্রুপের সংখ্যা ৬টি আর সদস্য সংখ্যা ৩২ জন। বায়েজিদ থানায় গ্রুপ ২টি এবং সদস্য সংখ্যা ৮।
সিএমপি কমিশনারমো. মাহবুবর রহমান বলেন, কিশোর গ্যাংদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের যারা প্রশ্রয়দেন তাদেরকেও আমরা তালিকার মধ্যে এনেছি। আমরা কাউকেই ছাড়দেব না।  সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আমেনাবেগম বলেন, কথিত বড় ভাই ও তাদের গ্যাংয়ের সদস্যদের তালিকা আমরা করছি।সে অনুযায়ী ব্যবস্থানেওয়া হবে। যার বিরুদ্ধেই অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।