চট্টগ্রামে অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়, কি পরিমাণ কাটা হয়েছে বা জড়িতদের কোন তথ্য নেই!

চট্টগ্রামে অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়, কি পরিমাণ কাটা হয়েছে বা জড়িতদের কোন তথ্য নেই!
চট্টগ্রামে অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়, কি পরিমাণ কাটা হয়েছে বা জড়িতদের কোন তথ্য নেই!

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, হাটহাজারীর জালালাবাদ, সীতাকুণ্ড এবং জঙ্গিল সলিমপুরে কি পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়েছে, কারা পাহাড় কাটছে তার সঠিক তথ্য নেই পরিবশে অধিদপ্তর কিংবা কোন সংস্থার কাছে। এ অবস্থায় তাদের চিহ্নিত করতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির সভায় গঠন করা হয় গঠন করা হয় অনুসন্ধান কমিটি।

অনুসন্ধান কমিটি দীর্ঘ তিনমাস পর গত মে মাসে প্রতিবেদন দিলেও উল্লেখিত এলাকায় কী পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়েছে কিংবা পাহাড় কাটার সাথে কারা জড়িত তাদের কোন তথ্য দিতে পারেনি। তবে পাহাড় কাটা বন্ধে ১১টি সুপারিশ করেছে কমিটি।

কমিটির সদস্য সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন অনুসন্ধান কমিটির সভায় জানিয়েছেন, জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর ছিন্নমূল বস্তিতে প্রায় ৪০ হাজার লোক অবৈধভাবে বসবাস করছে। জঙ্গল সলিমপুর এলাকার সব জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। সেখানে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পাহাড় কাটার সাথে জড়িতরা আগেভাগে খবর জেনে যাওয়ায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। সেখানে দখলদারদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। অবৈধ বসবাসকারীর আশ্রয়দাতাদের নির্দেশে প্রবেশমুখে বাঁশ, সিএনজি ট্যাক্সি আর পিকআপ রেখে তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাতের আঁধারে পাহাড় কাটে তারা। যার কারণে পাহাড় কাটার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত বলেন, উচ্ছেদ করার চেষ্টা করায় তারা মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেছে। রিটের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক তাঁর বক্তব্যে বলেন, সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সহায়তায় সরকারি খাস জমি চিহ্নিত করতে হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ের ক্ষেত্রে মালিকদের তালিকা তৈরি করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অনুরোধ করেন। বর্ষা মৌসুমের আগেই জেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা পুলিশ, মহানগর পুলিশ, র‌্যাব ও সেবা সংযোগ প্রদানকারি সংস্থার সমন্বিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ বসবসাকারিদের উচ্ছেদের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরকে এনফোর্সমেন্ট এবং মামলা দায়ের কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গঠিত অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা : 

১৭ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামালকে আহ্বায়ক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (জেলা) ফেরদৌস আনোয়ার ও মিয়া মাহমুদুল হককে (উপ পরিচালক মেট্টো) সদস্য সচিব করে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা হলেন, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, র‌্যাব-৭ এর একজন প্রতিনিধি, বায়েজিদ, আকবরশাহ, হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ড থানার ওসি, ফরহাদাবাদ, সলিমপুর ও সীতাকুণ্ডের ইউপি চেয়ারম্যান।

অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে পাহাড়া কাটা বন্ধে ১১টি সুপারিশ:

অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে পাহাড়া কাটা বন্ধে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। তা হলো, অবৈধ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যেতে পারে। পাহাড়ে বসবাসকে নিরুৎসাহিত করতে সেখানে অবৈধ বিদ্যুৎ, পানি আর গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে সমন্বিত বৈঠক করা। পাহাড় কিংবা টিলার ভূমি শ্রেণি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসকে নির্দেশনা দেয়া ও পাহাড় শ্রেণির ভূমি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের মতামত গ্রহণের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা। খাস জমিতে লাল পতাকা, কাঁটা তার অথবা পিলারের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করা। কমিউিনিটি লিডারদের মাধ্যমে স্থানীয় লোকদের পাহাড় কাটা বন্ধে সচেতনতা করা অথবা কমিউনিটি ভিত্তিক সার্ভেল্যান্স টিম গঠন করা। পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট ভুমি অফিসের সহযোগিতায় বিএস আরএস খতিয়ানের ভিত্তিতে পাহাড় ও টিলার তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতে পারে। সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস, থানা, পরিবেশে অধিদপ্তর পৃথকভাবে অথবা সমন্বিতভাবে পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের তালিকা তৈরি করতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ের মালিকদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করা যেতে পারে। পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারিদের উচ্ছেদের বিষয়ে হাইকোর্টের (রিট পিটিশন নং-১৪৯৬৮/১৭) নির্দেশের আলোকে অবৈধ বসবাসকারীদের পুনর্বাসন করা যেতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাহাড় কিংবা টিলার গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন প্রকার জনসচেতনতামূলক সভা, টিভিসি, ব্যানার পোস্টার কিংবা বিলবোর্ড স্থাপন করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা যেতে পারে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;