সীমিত পরিসরে শুরু হলো পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা

সীমিত পরিসরে শুরু হলো পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রাণঘাতী মহামারী করোনাকালে বদলে যাওয়া সময়ে সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে পবিত্র হজ পালনের আনুষ্ঠানিকতা। সৌদি আরবে মঙ্গলবার রাতে নিজ নিজ আবাস এবং মসজিদুল হারাম থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনায় অবস্থান নিয়েছেন হজপালনকারীরা। আজ বুধবার সারাদিন মিনায় থেকে বৃহস্পতিবার আরাফাত ময়দানে যাবেন হজে অংশগ্রহণকারী। সেখানে দিনভর ইবাদত করে গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর জিকির করবেন। তারপর আরাফাত ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে যাবেন মুজদালিফায়। মুজদালিফায় রাতযাপন করে ঈদের দিন শয়তানকে পাথর ছুড়বেন হজব্রত পালনকারীরা। এরপর আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য পশু কোরবানি দেবেন। তারপর মাথা মুÐন করে কাবা শরিফকে বিদায়ি তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

তবে করোনা মহামারিতে এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে পবিত্র হজ। গত ৯০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সৌদি আরবের বাইরে থেকে কেউ হজে অংশ নিতে পারছেন না। দেশটিতে বসবাসকারী স্থানীয় ও বিদেশি মিলিয়ে মাত্র ১০ হাজারের মতো মানুষ অংশ নিচ্ছেন এবারের হজে। অথচ অন্যান্য বছর হজ উপলক্ষে সারাবিশ^ থেকে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় উপস্থিত হতেন ২০ লাখেরও বেশি মুসল্লি।

এবার হজে অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এবার প্রত্যেককে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হজের সময় কাবাশরিফ স্পর্শ বা চুম্বন করা যাবে না। বজায় রাখতে হবে দেড় মিটার শারীরিক দূরত্ব। তাওয়াফ, নামাজসহ প্রতিটি কাজেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

হজের অংশ হিসেবে মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা ও মক্কায় পাঁচদিন অবস্থান করবেন পবিত্র হজব্রত পালনে যাওয়া মুসল্লিরা। এর আগে সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় পরে হজের নিয়ত করে মিনার উদ্দেশে রওনা হন হজযাত্রীরা। যাত্রাপথে তাদের মুখে ছিল ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।’

হজ পালনকারীদের জন্য মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। আজ বুধবার সারাদিন মিনায় অবস্থান করে রাতে ও প্রত্যুষে আরাফাতের ময়দানের দিকে যাত্রা করবেন তারা। বৃহস্পতিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেওয়া হবে। হজের খুতবা শেষে জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে পড়বেন হাজীরা। সেদিন সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে গিয়ে তারা মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থানের পর শয়তানের স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নেবেন হাজীরা। ওইদিন ফজরের নামাজ শেষে বড় জামারায় (প্রতীকী বড় শয়তান) পাথর নিক্ষেপ করতে মিনায় যাবেন তারা। পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি দেবেন হাজীরা। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়।

ইসলামের বিধান মোতাবেক ১০ জিলহজ মিনায় প্রত্যাবর্তনের পর হাজীদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি (অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন), মাথা ন্যাড়া করা এবং তাওয়াফে জিয়ারত। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজীরা। সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ি তাওয়াফের মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।