মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (দ.) প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসা

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (দ.) প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসা

হাম্মাদ রিফাত ।।

নবিজী মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (দ.)-কে ভালোবাসা খাঁটি ঈমানদারের আলামত। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (দ.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি ও সব মানুষ থেকে প্রিয় হব।’ (বুখারি : ১৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (দ.) বলেন ‘তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে যার কাছে আল্লাহ ও তার রাসুল সবচেয়ে প্রিয় হবে।’ (মুসলিম : ৬৭)। নবীজিকে কীভাবে ভালোবাসতে হয়, তার উত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাহাবিগণ।
উপমাহীন ভক্তি-ভালোবাসা : আল্লাহ তায়ালা সাহাবিদের অন্তরে নবীজির ভালোবাসা বদ্ধমূল করে দিয়েছিলেন। ফলে নবীজির প্রতি তারা যে ভক্তি ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন পৃথিবীর অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। হাদিসে এসেছে, হজরত উরওয়া ইবনে মাসউদ (রা.) ইসলাম গ্রহণের আগে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মুশরিকদের পক্ষ হয়ে চুক্তি করতে এসেছিলেন। রাসুল (দ.)-এর সঙ্গে আলোচনা-চুক্তির পর নিজ কওমের নিকট ফিরে অনুভূতি পেশ করেছিলেন আমি অনেক রাজা-বাদশাহদের কাছে প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছি। কায়সার, কিসরা ও নাজ্জাশির কাছেও গিয়েছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (দ.)-কে তার সঙ্গীরা যেভাবে ভক্তি করে, সেভাবে আমি আর কাউকে দেখিনি তাদের বাদশাহকে ভক্তি করতে। আল্লাহর কসম! তিনি থুথু ফেললেই তাদের কেউ না কেউ তা হাতে নিয়ে নেয় এবং তা চেহারায় ও শরীরে মাখে। তিনি যখন তাদের আদেশ করেন, তখন তারা তার আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর যখন তিনি অজু করেন, তখন তার অজুতে ব্যবহৃত পানি পাওয়ার জন্য লড়াই করার উপক্রম হয়!’ (বুখারি : ২৫৮১)
নবীজির চুল সংগ্রহ : নবীজির মাথা মোবারক থেকে চুল বা দাড়ি পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তা সংগ্রহ করার জন্য সাহাবিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন ‘আমি রাসুল (দ.)-কে দেখেছি, তার চুল মোবারক মুণ্ডন করা হচ্ছে আর সাহাবিরা তাকে ঘিরে আছে। তারা চাচ্ছিলেন তার একটি চুলও যেন মাটিতে না পড়ে বরং কারও না কারও হাতেই পড়ে।’ (মুসলিম : ২৩২৫)
নবীজির জন্য জীবনবাজি : ইসলাম প্রচার-প্রচারে নবীজিকে অনেক লড়াই ও সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেক সময় দুশমনরা নবীজিকে প্রাণে মেরে ফেলার দুঃসাহসও দেখিয়েছে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সাহাবারা নিজেদের জীবনবাজি রেখে নবীজির জীবন রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। উহুদের যুদ্ধে একপর্যায়ে মুসলিমদের ওপর বিপর্যয় নেমে এলে নবীজিকে একা পেয়ে মুশরিকরা ঘিরে ফেলে এবং উপর্যুপরি তীর-তলোয়ারের আঘাত হানতে থাকে। সাহাবিগণ সেই মুহূর্তে নিজেদের বুক পেতে তীর গ্রহণ করেছেন, বাহু ও পিঠ এগিয়ে তলোয়ারের আঘাত পেতে নিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘উহুদ যুদ্ধের ভয়াবহ মুহূর্তে হজরত আবু তালহা (রা.) নিজের শরীরকে ঢাল বানিয়ে রাসুল (দ.)-এর ওপর আক্রমণ প্রতিহত করছিলেন। একপর্যায়ে যখন নবীজি উঁকি দিয়ে দেখতে উদ্যত হলেন তখন আবু তালহা (রা.) বলে উঠলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা-বাবা আপনার জন্য কোরবান হোক! আপনি উঁকি দেবেন না; আপনার গায়ে কোনো তীর এসে লাগতে পারে। আমার বুক আপনার জন্য উৎসর্গিত!’ (বুখারি : ৩৮১১)