আজকের মধ্যে জঙ্গল সলিমপুর ছাড়তে হবে, সেপ্টেম্বরে বড় উচ্ছেদ অভিযান 

আজকের মধ্যে জঙ্গল সলিমপুর ছাড়তে হবে, সেপ্টেম্বরে বড় উচ্ছেদ অভিযান 
জঙ্গল সলিমপুর ছাড়তে হবে ৩০ আগস্টের মধ্যে, সেপ্টেম্বরে বড় উচ্ছেদ অভিযান 

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

জঙ্গল সলিমপুরকে কেন্দ্র করে সরকারের নেয়া মহাপরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রণয়ন হতে যাচ্ছে মাস্টার প্ল্যান। এরই ধারাবাহিকতায় এ এলাকায় পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে পাহাড় ও টিলা শ্রেণীর জমি ক্রয়, বিক্রয়, হস্তান্তর সম্পূর্ণরুপে নিষেধ করা হয়েছে। নেপথ্যে থাকা ১৫ টি সমবায় সমিতিকে চিহিৃত করে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ভূমিদস্যু ইয়াছিনসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনুমতি ব্যতিরেকে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। অত্র এলাকার প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এর দায়িত্বে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩০-৪০ জনের একটি টিম। কে প্রবেশ করছে, কে বের হচ্ছে সে বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে এ চেকপোস্ট। এ ছাড়া পুরো জঙ্গল সমিলমপুর জুড়ে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরে প্রবেশ মুখে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়েছে প্রশাসন। এলাকার মুখে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করে সেখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ। তারা এখানে আসা প্রত্যেকটি যানবাহনের নথিপত্র তল্লাশি করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কাউকে অপ্রয়ােজনে যেতে দিচ্ছেন না।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানা যায়, জঙ্গল সলিমপুর আগামী আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে একটি উপশহরে রূপ নিবে। সে জন্য এ এলাকায় থাকা অবৈধ দখলদারদের সরাতে হবে। ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ পরিবার স্বউদ্যোগে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। আরো অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাছাড়া সরকার ৩০ আগস্ট পর্যন্ত যে সময় দিয়েছে তা আর ক'দিনের মধ্যে শেষ হচ্ছে ।

সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে বড় ধরণের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জঙ্গল সলিমপুর ও এর পাশের আলীনগরে বর্তমানে আড়াই থেকে তিন হাজার নিম্ন আয়ের পরিবার বসবাস করছে। এ পরিবারের সাথে আছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ভোটার প্রায় ৮ হাজার।

সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন এ সব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সরকারের নেয়া মহা পরিকল্পনা ঘিরে আমরা এগুচ্ছি। এ এলাকার অন্যতম অপরাধী ইয়াছিনসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে অনেকগুলো। পরিবেশের ক্ষতি, রাস্তা কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, পাহাড় কাটা, নতুন করে বসতি স্থাপনা, এ সব কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়েছে। সম্প্রতি দুইবার জঙ্গল সলিমপুরের বসতিরা রাস্তায় নেমে আন্দোলনের নামে জনজীবন অতিষ্ট করেছে উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, রাস্তায় নেমে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, প্রশাসনের কাজে বাধা দিয়েছে, রাস্তা দখল করেছে। এ সবের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা করা হয়েছে। এ সব মামলা এখন পুলিশ তদন্ত করছে। যে-ই জড়িত থাকুক, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জঙ্গল সলিমপুরে বিদ্যুৎ, পানির কী অবস্থা জানতে চাইলে প্রশাসনের এ কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে ওয়াসার পানির সংযোগ নেই। বাহির থেকে নিজস্ব প্রচেষ্টায় তারা পানি নিয়ে যেত। বর্তমানে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন টিউবওয়েল ও কূপ থেকে বসতিরা পানি সংগ্রহ করেন।

জঙ্গল সলিমপুরে বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঝখানে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে দৈনিক ১২-১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। যেহেতু তারা এখনও সেখানে রয়েছে, তাই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে আলী নগরে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। পাহাড় কাটায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। জমি বেচাকেনার সাথে জড়িত সমবায় সমিতিগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় জঙ্গল সলিমপুর ছাড়তে ৩০ আগস্ট সময় বেধে দেয়া হয়েছে। আগামী মাসের শুরুর দিকে বড় অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ এলাকায় অবৈধ বসতি থাকবে না। তিনি বলেন, মহা পরিকল্পনায় অনেকগুলো প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নাইট সাফারি পার্ক। এ পার্ক ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে। আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে পশু পাখি।

উল্লেখ্য, জঙ্গল সলিমপুর প্রকল্পে থাকছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি স্পোর্টস ভিলেজ, জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল, একটি সাফারি পার্ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, একটি নান্দনিক মসজিদ, উচ্চ শক্তির বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র, পাহাড় ব্যাবস্থাপনা কমিটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ছিন্নমূলদের পুনর্বাসন প্রকল্প।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;