দুর্নীতির সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চান চতুর্থ গ্রেডের প্রকৌশলীও

দুর্নীতির সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চান চতুর্থ গ্রেডের প্রকৌশলীও, দুর্নীতির সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে

রফিকুল ইসলাম সবুজ।।

গণপূর্ত অধিদফতরের মতো স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরেও কয়েকজন প্রকৌশলীর ছত্রছায়ায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত এক তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ঠিকাদারদের এই সিন্ডিকেট টেন্ডার জালিয়াতি ও নিম্নমানের কাজ করে বিল তুলে নেওয়াসহ কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই চক্রের মূল হোতা চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা একজন তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখতে এবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে দৌড়-ঝাঁপ করছেন। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বিগত সময়ে নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালের কার্যক্রম সম্প্রসারণসহ উপজেলা পর্যায়ে চার শতাধিক কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়। এসব কাজের মান নিয়ে স্বয়ং সংস্থার প্রকৌশলীদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। এই সংস্থার সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর দুর্বলতার সুযোগে সংস্থার তৃণমূল পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি লাগামহীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে জড়িত সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম ও নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মোল্লাসহ ঠিকাদারদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নজরুল ইসলাম গত বছরের ২০ ডিসেম্বর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পান। এই কর্মকর্তা তার ৩২ বছরের চাকরি জীবনের প্রায় ২৯ বছর ধরে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে তাকে কেন্দ্র করেই ঠিকাদারদের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি হওয়ার এই সুবাদে তিনি তার সিন্ডিকেটের কয়েকজন ঠিকাদারকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কাজ পাইয়ে দেন। গত ৫ বছরে পিপিআর লঙ্ঘন করে এই সিন্ডিকেটের ৮-১০টি প্রতিষ্ঠানকে বেশিরভাগ কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আগামী ২৫ জানুয়ারি তত্ববধায়ক প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের অবসরে যাওয়ার কথা। বর্তমানে যেখানে সরকারের গ্রেড-১ পদ মর্যাদার সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ তেমন কেউ পাচ্ছেন না, সেখানে চতুর্থ গ্রেডের এই প্রকৌশলীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ শাহাদাত খন্দকার স্বাক্ষরিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে নজরুল ইসলাম চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা হলেও ইতোমধ্যে তিনি পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদটি নবসৃষ্ট বিধায় প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি বর্তমানে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন থাকায় তাকে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে চুক্তিভিত্তিতে কাজ করতে আগ্রহী।
অন্যদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য এই প্রকৌশলীর সিন্ডিকেটের ঠিকাদাররা কয়েক কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে বর্তমানে আরও আটজন তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী কর্মরত। এ অবস্থায় আরও একজন তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানোর খবরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে অধিদফতরে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) নজরুল ইসলামের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।-সময়ের আলো ।