নূপুর শর্মার উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া , যা কিছু অশান্তি হচ্ছে তার জন্য দায়ী নূপুর: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

নূপুর শর্মার উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া , যা কিছু অশান্তি হচ্ছে তার জন্য দায়ী নূপুর: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
নূপুর শর্মার উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া , যা কিছু অশান্তি হচ্ছে তার জন্য দায়ী নূপুর: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

নূপুর শর্মার উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সাময়িক বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার করা এক পিটিশনের শুনানিতে আজ শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালত এ মন্তব্য করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে তাঁর মন্তব্য ঘিরে ভারতে এখন যা ঘটছে, এ জন্য নূপুর শর্মা ‘একাই দায়ী’। খবর এনডিটিভির।

বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘কীভাবে তিনি (নূপুর শর্মা) বিতর্ক উসকে দিয়েছেন আমরা দেখেছি। কিন্তু যেভাবে তিনি পুরো বিষয়টি বললেন এবং পরবর্তী সময় নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিলেন, তা লজ্জাজনক। তাঁর উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।’

নূপুর শর্মা তাঁর মন্তব্য ঘিরে দায়ের করা সব অভিযোগ (এফআইআর) দিল্লিতে স্থানান্তর করতে পিটিশন দায়ের করেন। তাঁর আইনজীবীর দাবি, নূপুর শর্মা হুমকির মুখে রয়েছেন।

বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘তিনি হুমকির মুখে রয়েছেন নাকি নিজেই নিরাপত্তা হুমকি হয়ে উঠেছেন? যেভাবে তিনি দেশজুড়ে (ধর্মীয়) আবেগ উসকে দিয়েছেন। দেশে যা কিছু ঘটছে, তার জন্য এই নারী একাই দায়ী।’

সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেছেন, নূপুর শর্মার মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তাঁর ‘একগুঁয়ে ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ’ প্রকাশ পেয়েছে।

বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘তিনি (নূপুর শর্মা) যদি একটি দলের মুখপাত্র হন, তাহলে যা হয়। তিনি ভেবেছেন, তাঁর প্রতি সরকারের সমর্থন আছে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়াই তিনি যে কোনো বক্তব্য দিতে পারেন।’

এ সময় নূপুর শর্মার আইনজীবী বলেন, তিনি কেবল টেলিভিশন বিতর্কে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। জবাবে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘তাহলে সঞ্চালকের বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিত।’

আইনজীবী আরও যুক্তি দেন, এ ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের কোনো কিছু বলার অধিকার নেই। জবাবে অনেকটা বিদ্রূপের সুরে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেকেরই কথা বলার অধিকার আছে। গণতন্ত্রে ঘাস গজানোর অধিকার রয়েছে এবং গাধার সেটা খাওয়ার অধিকার আছে।’

মুক্ত সাংবাদিকতার অধিকার বঞ্চিত যাতে করা না হয় এ–সংক্রান্ত একটি আদেশ উল্লেখ করে নূপুর শর্মার পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়। জবাবে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘তাঁকে (নূপুর শর্মা) সাংবাদিকের আসনে বসানো যেতে পারে না। (বিশেষ করে) যখন তিনি টিভি বিতর্কে গিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন এবং সমাজের কাঠামোতে এর প্রভাব ও পরিণতির কথা চিন্তা না করে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেন।’

গত ২৬ মে এক টেলিভিশন বিতর্কে মহানবী (সা.)–কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন নূপুর শর্মা। বিজেপির দিল্লি শাখার গণমাধ্যমপ্রধান নবীন কুমার জিন্দালও মহানবী সম্পর্কে টুইটারে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। তুমুল সমালোচনার মুখে নূপুর শর্মাকে সাময়িক বরখাস্ত ও জিন্দালকে বহিষ্কার করে বিজেপি।

বিজেপির দুই নেতার অবমাননাকর মন্তব্যে দেশ-বিদেশে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভারতে বিক্ষোভ করেন মুসলমানেরা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আরব ও মুসলিম বিশ্ব। অন্তত ১৬টি দেশ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

নূপুর শর্মাকে নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের যে ৫ মন্তব্য

এক.
নূপুর শর্মার মন্তব্য ঘিরে করা অভিযোগগুলো (এফআইআর) দিল্লিতে স্থানান্তরের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী। তিনি বলেন, নূপুর শর্মা হুমকির মুখে রয়েছেন এবং কোথাও যাতায়াত তাঁর জন্য এখন নিরাপদ নয়। জবাবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, তিনি হুমকির মুখে রয়েছেন নাকি নিজেই নিরাপত্তা–হুমকি হয়ে উঠেছেন? যেভাবে তিনি দেশজুড়ে (ধর্মীয়) আবেগ উসকে দিয়েছেন, দেশে যা কিছু ঘটছে, তার জন্য এই নারী একাই দায়ী।

দুই.
বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘কীভাবে তিনি (নূপুর শর্মা) বিতর্ক উসকে দিয়েছেন, আমরা দেখেছি। কিন্তু যেভাবে তিনি পুরো বিষয়টি বললেন এবং পরবর্তীকালে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিলেন, তা লজ্জাজনক। তাঁর উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।’

তিন.
দিল্লি পুলিশ ও বিতর্ক আয়োজনকারী টেলিভিশন চ্যানেলের প্রসঙ্গ টেনে সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘দিল্লি পুলিশ কী ভূমিকা পালন করেছে? আমাদের মুখ খুলতে বাধ্য করবেন না; কী নিয়ে টেলিভিশন বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল? একটা ইস্যু উসকে দিতে? কেন তারা একটি বিচারাধীন বিষয়কে বিতর্কের জন্য নির্ধারণ করেছিল?’

চার.
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিত করে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘যখন আপনারা অন্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন, তাঁরা তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার হন। যখন সেটা আপনাদের বিরুদ্ধে হয়, তখন আর কেউ আপনাদের স্পর্শ করার সাহস পায় না।’

পাঁচ.
নূপুর শর্মার সমালোচনা করে সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেছেন, নূপুর শর্মার মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তাঁর ‘একগুঁয়ে ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ’ প্রকাশ পেয়েছে। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, তিনি (নূপুর শর্মা) যদি একটি দলের মুখপাত্র হন, তাহলে যা হয়। তিনি ভেবেছেন, তাঁর প্রতি সরকারের সমর্থন রয়েছে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়াই তিনি যেকোনো বক্তব্য দিতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের করা ১২টি মন্তব্য তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য:

১. নূপুরের অবিবেচকের মতো মন্তব্যের কারণেই উদয়পুরের নৃসংশ ঘটনা ঘটেছে। ২. নূপুরের মন্তব্য মানুষের আবেগ উস্কে দেওয়ার মতো। ৩. নূপুর টিভিতে গিয়ে গোটা দেশের কাছে ক্ষমা চান। ৪. নূপুর ক্ষমা চাইতেও দেরি করেছেন। ৫. নূপুরের মতো মানুষেরা অবিবেচকের মতো মন্তব্য করে হিংসায় উস্কানি দেন। ৬. দেশে যা কিছু অশান্তি হচ্ছে, তার জন্য একমাত্র দায়ী নূপুর। ৭. নূপুরের মন্তব্য গোটা দেশে আগুন জ্বালিয়েছে। ৮. নূপুরের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। নূপুরই নিরাপত্তার জন্য বিপদ হয়ে উঠেছেন। ৯. রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হওয়ার অর্থ এই নয় যে- যা মুখে এলো তাই বলে দিলাম। ১০. ক্ষমতার দম্ভ নূপুরের মাথায় চড়ে গিয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;