ঝুলে গেছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি

এম মামুন হোসেন ।।

ঝুলে গেছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি
প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ঝুলে গেছে

সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও তারা বেতন পান ১১তম গ্রেডে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্য সব চাকরিজীবী ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। ৩৪তম বিসিএস থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা সবাই ১০ম গ্রেডে বেতন-ভাতা পেলেও শুধু সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১১তম গ্রেডে। এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছেন। প্রাথমিক স্তরের প্রধান শিক্ষকদের এই গ্রেড বৈষম্য কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদেরও বৈষম্য কমানোর প্রস্তাব পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু জানা গেছে, বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে ঝুলে গেছে সাড়ে ৩ লাখ প্রাথমিকের শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া।

 
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিদ্যমান বেতন যথাযথ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে বেতন গ্রেড যথাযথ ও সঠিক থাকায় প্রধান শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১০ ও সহকারী শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১২-তে উন্নীতকরণের সুযোগ নেই।
 
আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্তে¡ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনও রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
 
দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে আসছিল সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেতন বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। পরবর্তীতে দাবি আদায়ে প্রধান শিক্ষকরা হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। ঢাকার সূত্রাপুরের গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে ওই রিট দায়ের করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। রায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় প্রধান শিক্ষকদের প্রবেশ পদে বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হলে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকদের বৈষম্য কমে যাবে। মাধ্যমিক স্তরের সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে গ্রেড বৈষম্য রয়েছে তাও কমবে। বর্তমানে প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষক বেতন পান ১২তম গ্রেডে (১১৩০০ টাকা বেতন স্কেল) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১তম গ্রেডে (১২৫০০ টাকা বেতন স্কেল)। আর প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষক ১৫তম গ্রেডে (৯৭০০ টাকা বেতন স্কেল) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে (১০২০০ টাকা বেতন স্কেল) বেতন পান। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের বেতনের পার্থক্য তিন ধাপ। সহকারী শিক্ষকরা এই পার্থক্য কমানোর দাবিতে আন্দোলনও করেছেন।
 
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার সমন্বয়ে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসম্মতিতে বিষয়টি বিলম্বিত হলেও প্রাথমিকের শিক্ষকদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেডসহ বৈষম্য নিরসনের কথা বলা হয়েছে। তাই মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অর্থ মন্ত্রণারয়ের চিঠি এখনও হাতে পাননি বলে জানান তিনি।