সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বায়েজীদ লিংক রোড যেন মৃত্যুকূপ, বৃষ্টি হলেই বিপজ্জনক সড়ক!

সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বায়েজীদ লিংক রোড যেন মৃত্যুকূপ, বৃষ্টি হলেই বিপজ্জনক সড়ক!
সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বায়েজীদ লিংক রোড যেন মৃত্যুকূপ, বৃষ্টি হলেই বিপজ্জনক সড়ক!

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

শনিবার দুপুরে মোটরসাইকেলে চড়ে বাবা ফারুকের সঙ্গে কলেজে যাচ্ছিলেন ফাতেমা জাহান জেবা। সে নগরীর এনায়েতবাজার মহিলা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তো। সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বায়েজীদ লিংক রোডের ৩ নম্বর সেতু এলাকায় আসতেই কাদামাটিতে পিছলে যায় মোটরসাইকেল। সামনের দিকে বাবা আর পেছেনে ছিটকে সড়কে পড়েন ফাতেমা। মুহূর্তে দ্রুতগতির একটি লরি তাঁকে চাপা দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই বাবার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা যান ফাতেমা। এসময় আচমকা মেয়েকে হারিয়ে বিধ্বস্ত, দিশেহারা হয়ে পড়েন বাবা মোহাম্মদ ফারুক। চোখের সামনে মেয়েকে ছটফট করতে করতে মরতে দেখে উদভ্রান্তের মতো আচরণ করতে থাকেন ফারুক। শুধু ফাতেমা না । গত এক বছরে এ সড়কে সড়কে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে স্থানীয় লােকজন বলছেন, এ সংখ্যা ৩০ এর কম নয়। 

পুলিশ বলেছে, সব দুর্ঘটনার খবর তাদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছায় না। ১০টি দুর্ঘটনার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বায়েজিদ বােস্তামী ও সীতাকুণ্ড থানায় মামলা হয়। এর বাইরেও বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, যা মামলা না হওয়ায় দুর্ঘটনাগুলাে নথিভুক্ত হয়নি। 

স্থানীয়রা অবশ্য দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলেন, সড়কে ট্রাফিক ও গতিসীমার সংকেত নেই। এ ছাড়া বর্ষার পাহাড়ি ঢলে মাটি নেমে আসে সড়কে। বৃষ্টি হলেই সড়কটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।  তার ওপর এই সড়কে নেই কোনাে ট্রাফিক সংকেত। গাড়ি চলে বেপরােয়া গতিতে। এতেই দুর্ঘটনা ঘটে বেশী। 

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানাধীন শেরশাহ বাংলাবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পর্যন্ত নির্মিত ছয় কিলােমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণের সময় পাহাড় কাটায় মানা হয়নি নিয়মনীতি। একের পর এক পাহাড় কাটা হয়েছে খাড়াভাবে। ফলে বৃষ্টি হলেই খাড়া পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ছে সড়কের ওপর। তাছাড়া গত বছর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন ক্যাম্পাসের পেছনে চারটি পাহাড় ধসে সড়কের ওপর পড়লেও দীর্ঘদিনেও ধসে পড়া সেই মাটিই সড়কের পাশ থেকে সরায়নি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ফলে ওই চার স্থানসহ আরও নতুন পাঁচ স্থানে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি পানির স্রোতের সঙ্গে সড়কে মাটি এসে জমা হয়। এতে দিন দিন  ঝুঁকিও বাড়ছে।

ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল করিম বলেন, গত বছর সড়কটির একটি অংশ বন্ধ করে দেয়  সিডিএ। এরপর এক লাইনে দ্বিমুখী গাড়ি চলতে গিয়ে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব দুর্ঘটনায় অভিযােগ তাদের ফাঁড়ি পর্যন্ত আসেনি । মামলা না হওয়ায় এই দুর্ঘটনাগুলাে নথিভুক্ত হয়নি।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্র জানায়, ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক নির্মাণ করেছে সিডিএ। সড়কটি ব্যবহার করে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলার গাড়ি মূল শহরে প্রবেশ না করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারে। এখনাে পুরােপুরি কাজ শেষ না হলেও এক বছর আগে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সড়কটি।

চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর পাহাড়ধসের কারণে গত বছরের বর্ষায় ফৌজদারহাটমুখী লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে আবার খুলে দেওয়া হয়। এই সড়ক নির্মাণে ১৫টি পাহাড় কাটতে হয়েছে। অনুমােদনের চেয়ে বেশি পাহাড় কাটায় গত বছরের জানুয়ারিতে সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির প্রায় এক কিলােমিটার জায়গার পাঁচ স্থানে সড়কের ওপরই মাটি পড়ে আছে ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদ বিন আনােয়ার বলেন, সড়ক প্রকল্পের কাজ এখনাে পুরােপুরি শেষ হয়নি। মূলত প্রকল্পের কাজ শেষের পর ট্রাফিক সংকেত দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে দ্রুত ট্রাফিক সংকেত স্থাপন করা হবে । তাছাড়া কিছু অংশে প্রতিরােধ দেয়াল নির্মাণের কাজ বাকি আছে বলে জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;