বহুল প্রত্যাশার ই-পাসপোর্ট আসছে বিজয় দিবসের আগেই

বহুল প্রত্যাশার ই-পাসপোর্ট আসছে বিজয় দিবসের আগেই
বহুল প্রত্যাশার ই-পাসপোর্ট আসছে বিজয় দিবসের আগেই

হাসান আকবর ।।

বহুল প্রত্যাশার ই-পাসপোর্ট চালু হচ্ছে বিজয় দিবসকে সামনে রেখে । বিশ্বের ১১৯ নম্বর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করছে। পাঁচ বছর ও দশ বছর মেয়াদের দুই ধরনের পাসপোর্ট দেয়া হবে। ইতোমধ্যে সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে বারো হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে ই পাসপোর্ট ইস্যুর সব আয়োজনই চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দিন কয়েকের মধ্যেই এ পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সরকারের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগ পাসপোর্ট ইস্যু করে থাকে। দেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষের হাতে পাসপোর্ট রয়েছে। দেশের বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন গড়ে পঁচিশ হাজার মানুষ নয়া পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে। অবশ্য বাংলাদেশে এমআরপি চালু হতে সময় লাগে ৩০ বছর। ২০১০ সালে বাংলাদেশে যখন এমআরপি দেয়া শুরু হয়, এর আগে ২০০৮ সালে উন্নত বিশ্বে ই-পাসপোর্ট চালু হয়ে যায়। বর্তমানে পৃথিবীর ইউরোপ আমেরিকা কানাডাসহ ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু রয়েছে।
২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালুর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি সফরে যান। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে ই পাসপোর্টের ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক এবং পরবর্তীতে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তির ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েক দফা তারিখ পিছিয়ে অবশেষে বিজয় দিবসকে সামনে রেখে বহুল প্রত্যাশার ই পাসপোর্ট চালু করা হচ্ছে।
এ পাসপোর্ট হবে দুই ধরনের। একটাতে থাকবে ৪৮ পৃষ্ঠা, আরেকটাতে থাকবে ৬৪ পৃষ্ঠা। ভবিষ্যতে সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। সাধারণ আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং অন্যান্য তথ্য সঠিক থাকলে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে। জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও অন্যান্য তথ্য ঠিক থাকলে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে। অতি জরুরি পাসপোর্ট পাওয়া যাবে ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে। তবে এ ক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনকারীকে নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে আবশ্যিকভাবে আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। তবে পুরনো অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে অতি জরুরি পাসপোর্ট দুই দিনে, জরুরি পাসপোর্ট তিন দিনে এবং সাধারণ পাসপোর্ট সাত দিনের মধ্যে দেয়া হবে।
পাসপোর্টের ফি ও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৪৮ পৃষ্ঠা ও ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য দুই ধরনের ফি নির্ধারণ করা হয়। ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি তিন হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও অতি জরুরি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদের পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৫ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা ও অতি জরুরি ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৭ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা ও অতি জরুরি ফি ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে পাসপোর্টে সাধারণ ফি ভ্যাটসহ তিন হাজার ৪৫০ টাকা এবং জরুরি ফি ভ্যাটসহ ছয় হাজার ৯০০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। শিশুদের ১০ বছর মেয়াদের পাসপোর্ট দেয়া হবে না উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, বড় হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চাদের চেহারা যেহেতু পাল্টে যায় এবং নতুন তথ্যের সৃষ্টি হয় তাই তাদের পাসপোর্ট দশ বছর করা হবে না। শিশুদের (১৮ বছরের কম) পাসপোর্টের আবেদনে আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী ই পাসপোর্ট তৈরি হবে।
ই-পাসপোর্ট চালু হলেও এমআরপি প্রদান এখন বন্ধ হচ্ছে না উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই ধরনের পাসপোর্টই চালু থাকবে। বিদ্যমান ফি দিয়ে এমআরফি পাওয়া যাবে। আবেদনকারীর আবেদনের ভিত্তিতে ই পাসপোর্ট এবং এমআরপি প্রদানের বিষয়টি নির্ধারিত হবে।
ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডাটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া চোখের মণির ছবি ও দশ আঙুলের ছাপ থাকবে। ই-পাসপোর্টের জন্য দেশের ইমিগ্রেশনগুলোতে ই গেট স্থাপন করা হয়েছে বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।