ফুটবলের টানে মানুষ এখনো মাঠে ছুটে আসে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে

নজরুল ইসলাম ।।

ফুটবলের টানে মানুষ এখনো মাঠে ছুটে আসে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে

অনেকেই মনে করতে পারছিলেন না এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সর্বশেষ কবে হাউজফুল দর্শক দেখেছে সেটা । যদিও কদিন আগে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রতিদিনই গ্যালারী ভর্তি দর্শক ছিল। কিন্তু ফুটবলে দর্শক ভরা গ্যালারী দেখা পাওয়াটা বলতে গেলে সৌভাগ্যের ব্যাপার। যদিও এখনো বাংলাদেশে সবচাইতে জনপ্রিয় খেলাটির নাম ফুটবল। কিন্তু দর্শকরা কেমন যেন ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তবে এখনো যে ভাল মানের ফুটবল হলে দর্শকরা মাঠে সেটা আবারো প্রমাণীত হলো।

চট্টগ্রাম আবাহনী আয়োজিত শেখ কামাল ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে দর্শক হবে কিনা তা নিয়ে ছিল সংশয়। তবে এই টুর্নামেন্টে স্টেডিয়ামের গ্যালারী যাতে দর্শকে ভরা থাকে সে জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে আয়োজকরা। বিনামূল্যে টিকিট বিক্রি থেকে শুরু প্রচার প্রচারনা সব কিছু করেছে। তার ফলও মিলেছে। টুর্নামেন্টের প্রায় সব ম্যাচেই দর্শকরা মাঠে এসেছে। বিশেষ করে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যাচ যেদিন ছিল সেদিন দর্শকরা গ্যালারী। ভরিয়ে দিয়েছে। তবে গতকাল যেন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের যৌবন দেখেছে দর্শকরা। ফুটবলের টানে মানুষ যে এখনো মাঠে ছুটে আসে তা প্রমাণ হলো গতকাল আরো একবার। এ যেন দর্শকের জোয়ার। নগরীর সবগুলো রাস্তা যেন মিশেছিল গতকাল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে।

গতকাল ছিল শুক্রবার। সপ্তাহিক ছুটির দিন। তার উপর গতকাল সন্ধ্যায় ছিল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলা। প্রতিপক্ষও আবার বেশ শক্তিশালী। ওপার বাংলার মোহন বাগান। যারা কিনা এই উপমহাদেশের ফুটবলে বেশ জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী। এই দুই জনপ্রিয় দলের খেলা দেখতে তাই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল। আর সেটা এমন ঢল যা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেনি কেউই। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের ধারন ক্ষমতা প্রায় ৩৫ হাজার। গতকাল পুরো স্টেডিয়াম যেন কানায় কানায় পূর্ন। গতকাল টুর্নামেন্টে দুটি খেলা ছিল। প্রথম ম্যাচের দুই দলই বাইরের হলেও দর্শকরা এসেছিল মাঠে। আর তাতেই আঁচ করা গিয়েছিল দ্বিতীয় ম্যাচে দর্শকের বান ডাকবে। সন্ধ্যা গড়াতেই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের চারদিকের রাস্তায় কেবল মানুষ আর মানুষ। সবার গন্তব্য একদিকে। আর সেটা এম এ আজিজ স্টেডিয়াম।

আজ থেকে বছর বিশেক আগে শুনতাম ফুটবলে টিকিট কালোবাজারী হয়। দীর্ঘ দিন এই কথা শুনেনি চট্টগ্রামের দর্শকরা। গতকাল টিকিট পেতে রীতিমত হা পিত্যেশ করতে হয়েছে দর্শকদের। সন্ধ্যার পর থেকেই যেন টিকিটের জন্য হাহাকার। খেলা শুরু হয়ে গেছে তখন। তারপরও স্টেডিয়ামের বাইরে মানুষ আর মানুষ। সবাই চেষ্টা করছে স্টেডিয়ামের ঢুকতে। কিন্তু সম্ভব হচ্ছিল না। চট্টগ্রামের ফুটবলার কিংবা দর্শক কিংবা ক্রীড়া সংগঠক সবারই একটি বিষয় জানা। আর সেটা হচ্ছে স্টেডিয়ামের গ্যালারী মানে পুরো দুই ভাগে বিভক্ত। একপাশে বল যাতো অন্যপাশের দর্শকরা গর্জে উঠবে। আবার অন্যপাশে বল যাবেতো অপর গ্যালারী গর্জে উঠবে। তবে গতকাল ছিল সবাই এক। সবাই যেন চট্টগ্রাম আবাহনীর সমর্থক। বল আবাহনী দর্শকদের পায়ে লাগলেই গর্জে উঠছে গ্যলারী । আর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারী সর্বশেষ কবে এমন গর্জেছে তা বলতে পারছিল না গতকাল প্রেসবঙে বসে খেলা দেখা এক সাবেক ফুটবলার। ফুটবল খেলায় এমন দর্শক দেখে অনেকটাই আবেগ প্রবন হয়ে পড়েছিলেন সে ফুটবলার। বললেন এমন দর্শকের সামনে খেলাটা কত আনন্দের তা বলে বুঝানো যাবে না। সে স্মৃতি তার রয়েছে অনেক। গতকাল যেন সেই আগের দিনে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি গ্যালারীর দর্শক দেখে। সাবেক ফুটবলার দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু। যিনি বর্তমানে একজন ক্রীড়া সাংবাদিক। তিনি তার খেলোয়াড়ী জীবনের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বললেন এটা হচ্ছে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে স্মরণ কালের সেরা দর্শক। এত দর্শক তার খেলোয়াড়ী জীবনেতো বটেই সাংবাদিকতা জীবনেও দেণেনি। তাই তিনিও দারুন আনন্দিত। এরকম দর্শকের সামণে খেলার মধুর স্মৃতি রয়েছে তারও। তারপরও গতকালের দর্শক আকর্ষন করেছে তাকে। তার মত অনেক সাবেক ফুটবলার আপ্লুত হয়ে পড়েন ফুটবলে এত দর্শক দেখে। আহারে কতদিন দেখিনি এত দর্শক।

সচরাচর ক্রিকেট মাঠে নারী পুরুষ নির্বিশেষে খেলা দেখার দৃশ্যটা চোখে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে সেটা দেখা মেলে কম। কিন্তু গতকাল পরিবার পরিজন নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন অনেকেই। নারী, পুরুষ, তরুন, যুবক সবাই মিলে যেন একাকার ছিল গতকাল। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারী যেন পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ক্ষণে ক্ষণে যারা গর্জে উঠছিল। যে প্রত্যাশা নিয়ে দর্শকরা মাঠে এসেছিল সেটাও যেন পূর্ন হলো তাদের। দর্শকরা দেখল পরিচ্ছন্ন একটি ম্যাচ। যে ম্যাচের প্রত্য্যাশা থাকে সবার। বেশ পরিচ্ছন্ন একটি ম্যাচ দেখেছে দর্শকরা মাঠে বসে। তবে সবচাইতে বড় প্রাপ্তি যেটা তা হচ্ছে মাঠে দর্শক আসা। ফাঁকা গ্যালারীর মাঠে খেলতে কার ভাল লাগে? দর্শক মাঠে থাকা মানেতো একজন ফুটবলারের পারফরম্যান্স দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া। আর এত দর্শকের সামনে খেলতে পেনে দারুন তৃপ্ত ফুটবলাররাও। আর আয়োজকদের যেন স্বস্তির শেষ নেই। এমন একটি আয়োজনইতো চেয়েছিলেন তারা।