বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর সিরিজ জয়

বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর সিরিজ জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক।।

তামিম ইকবাল জ্বলে উঠলেন। ক্যারিয়ার সেরা ১৫৮ রানের ইনিংসে গড়লেন কীর্তি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ছুঁলেন ৭ হাজার রানের মাইলফলক। ড্যাশিং এই ওপেনারের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশও পেল ৩২২ রানের রেকর্ড সংগ্রহ। তবে বড় রান তাড়ায় ভড়কে যায়নি জিম্বাবুয়ে; লড়েছে শেষ ওভার পর্যন্ত। যে লড়াইয়ে সফরকারীদের ৪ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মতুর্জার দল। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে ওয়ানডে সিরিজ।

প্রথম ওয়ানডেতে লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ; পায় ৩২১ রানের পুঁজি। এবার সেটাও পেছনে পড়ল তামিমের রেকর্ডময় ইনিংসে। এরপর টাইগার বোলাররাও পায় দারুণ শুরু। কিন্তু চাপ সামলে জিম্বাবুয়ে দল লড়াইয়ে ফেরে অভিজ্ঞ সিকান্দার রাজা এবং তরুণ ওয়েসলি মাধভেরের হাফসেঞ্চুরিতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি  রোমাঞ্চকর এক জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের সফরকারীদের। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৮ রানে থামলে নিশ্চিত হয় সিরিজ পরাজয়।

সিরিজ জয়ের দিনে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের প্রথম ২ উইকেটের পতন রান আউটে। ইনিংসের সপ্তম ওভারে দুর্ভাগ্যের শিকার লিটন। তামিমের ড্রাইভে বোলারের হাতের ছোঁয়ায় নন স্ট্রাইক প্রান্তে রানআউট হয়ে যান এই ওপেনার (৯)। তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও হন রানআউট। তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে তরুণ এই ব্যাটসম্যান থামেন ব্যক্তিগত ৬ রানে। তবুও এগিয়ে যেতে সমস্যা হয়নি লাল-সবুজ দলের।

কারণ এদিন তামিম ফেরেন চেনারূপে। ৪২ বলে স্পর্শ করেন হাফসেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি ১০৬ বলে। এরই মাঝে রেকর্ড গড়ে পৌঁছে যান ৭ হাজারির ক্লাবে। টাইগার ওপেনার থামেন ইনিংসের ৪৬তম ওভারে। জিম্বাবুয়ের পেসার মুম্বার শিকার হওয়ার আগে ১৩৬ বলে ২০ চার এবং ৩ ছক্কায় তিনি সাজান নিজের ১৫৮ রানের ইনিংসটি। যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে যেকোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।

সিলেটে তামিমময় দিনে হেসেছে মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটও। মুশফিক তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৮তম হাফসেঞ্চুরি (৫৫); মাহমুদউল্লাহ করেন ৪১। সিনিয়রদের গড়ে দেওয়া প্লাটফর্মে শেষ দিকে ঝড় তোলেন মোহাম্মদ মিঠুন। উইকেটের অপরপ্রান্তে নিচের সারির ব্যাটাররা কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে না পারলেও মিঠুন ছিলেন আগ্রাসী। ১৮ বল খেলে ৩ চার এবং ১ ছক্কায় অপরাজিত ছিলেন ৩২ রানে। তাতেই নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে রেকর্ড সংগ্রহ বাংলাদেশের।

এরপরও স্বাগতিকদের জয়ের পথটা ছিল না সুগম। যদিও টাইগার বোলারদের শুরুটা ছিল দারুণ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই শফিউল ইসলামের আঘাত। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং মোস্তাফিজুর রহমানের বিশ্রামের দিনে সুযোগ পাওয়া এই পেসার শিকার করেন রেগিস চাকাভাকে (২)। সফরকারীদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে। তাতে ব্যক্তিগত ১১ রানে সাজঘরে ব্রেন্ডন টেলর।

খানিক সময় বাদেই বোলার মিরাজের চমক। ঘূর্ণির জাদুতে টাইগার স্পিনার জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক উইলিয়ামসকে (১৪) ফেলেন এলবির ফাঁদে। এরপর হাফসেঞ্চুরিয়ান (৫১) টিনাশে কামুনহুকামউইকে শিকার বানান আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম এবং ২৩.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১০২ রান। তবে সফরকারীদের জয়ের স্বপ্ন তাজা হয় রাজা-মাধভেরের প্রতিরোধে। যা টিকে ছিল ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত।

পঞ্চম উইকেটে জিম্বাবুয়ের ৮১ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল। ফেরার আগে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মাধভেরে (৫২)। ইনিংসের ৪১তম ওভারে আবারও তাইজুলের আঘাত; কাটা পড়েন মাটুমবামি (১৯)। পরের ওভারেই মিলে বড় সাফল্য। টাইগার দলপতি মাশরাফি শিকার বানান রাজাকে (৬৬)। কিন্তু তাতেও ম্যাচ সহজ বানাতে পারেনি বাংলাদেশ। জয়-পরাজয়ের হিসেব শেষ ওভারে নিয়ে যান টিরিপানো আর মাটুমবোদজি।
এ যুগলের মারমুখী ব্যাটিংয়ে শেষ ৬ বলে জয়ের জন্য ২০ রান প্রয়োজন ছিল জিম্বাবুয়ের। এমন চাপের মুখে দ্বিতীয় বলেই উইকেট শিকার আল আমিনের। ফেরান মাটুমবোদজিকে (২১ বলে ৩৪ রান) এবং ভাঙেন ৮০ রানের জুটি। পরের দুই বলে টিরিপানোর দুই ছক্কা। কিন্তু জয়ের দূরত্ব ঘুচাতে পারেননি তিনি। ২৮ বলে ২ চার এবং ৫ ছক্কায় সাজানো তার ৫৫ রানের ইনিংসটি বৃথাই গেছে জিম্বাবুয়ের হারে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩২২/৮ (তামিম ১৫৮, মুশফিক ৫৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, মিঠুন ৩২*, শফিউল ৫*; মুম্বা ২/৬৪, টিরিপানো ২/৫৫, মাধভেরে ১/৩৮, টিশুমা ১/৩৫)
জিম্বাবুয়ে : ৫০ ওভারে ৩১৮/৮ (কামুনহুকামউই ৫১, মাধভেরে ৫২, রাজা ৬৬, মাটুমবামি ১৯, মাটুমবোদজি ৩৪, টিরিপানো ৫৫*; মাশরাফি ১/৫২, শফিউল ১/৭৬, মিরাজ ১/২৫, আল আমিন ১/৮৫, তাইজুল ৩/৫২)
ফল : বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : তামিম ইকবাল