মুসলমানদের অন্যতম ইবাদত নামাজ, নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়

আমিন ইকবাল ।।

মুসলমানদের অন্যতম ইবাদত নামাজ, নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়

নামাজ হলো মুসলমানদের অন্যতম ইবাদত। নামাজকে বলা হয় মুমিনের মিরাজ। এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ও তার বান্দার মধ্যে কথোপকথন হয়ে থাকে। নামাজ মানুষকে যাবতীয় পাপাচার ও অশ্লীলতা থেকে মুক্ত রাখে। নামাজের অসংখ্য ফজিলত ও তাৎপর্যের কথা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তবে ওইসব ফজিলত অর্জনের জন্য প্রয়োজনÑ মনোযোগসহ যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা। পবিত্র কোরআনে তাদেরকেই সফল বলা হয়েছে যারা একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ আদায় করে। আল্লাহ বলেন, ‘...এবং যারা তাদের নামাজগুলোর বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখে। ওরাই হলো তারা যারা হবে জান্নাতের উত্তরাধিকারী এবং সেখানেই থাকবে চিরকাল।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৯-১১)
আমরা নামাজ পড়ি ঠিকই কিন্তু নামাজে কী পড়ছি, রুকু-সেজদা ঠিকমতো হচ্ছে কি নাÑ সেসব সম্পর্কে খুব কমই খেয়াল রাখি। নামাজ তো কেবল ওঠাবসার নাম নয়, নামাজে আত্মার সংযোগ থাকতে হয়। সে জন্য প্রয়োজন একাগ্রতা। তাই নামাজকে কেন্দ্র করে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া চাই। নামাজের জন্য তিন ধরনের প্রস্তুতি হতে পারে।
মানসিক প্রস্তুতি
ষ    সারা দিনের কর্মপরিকল্পনা নামাজকে কেন্দ্র করে তৈরি করা। অর্থাৎ দিনের কাজ-কর্মের ফাঁকে ফাঁকে নামাজকে না ঢুকিয়ে আগে থেকেই প্ল্যান করে নেওয়াÑ যেন নামাজের সময়সূচিকে ঘিরে কাজ-কর্ম করা যায়।
ষ    নামাজের সময় সূচি মেনে চলা। ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়ে নেওয়া। সামান্য কারণে নামাজ পড়তে দেরি না করা।
ষ    পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু দাও’। (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৩)। এর দ্বারা জামাতে নামাজ পড়ার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
ষ    নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে সব অবসাদ, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলা।
ষ    নামাজে কোন কোন সুরা পড়বÑ তা নামাজে দাঁড়ানোর আগেই ঠিক করে নেওয়া।
শারীরিক প্রস্তুতি
ষ    নামাজে দাঁড়ানোর পূর্বে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া প্রভৃতি জৈবিক কাজ সেরে নেওয়া।
ষ    পরিচ্ছন্ন অবস্থায় নামাজ আদায় করা। সে জন্য সঠিকভাবে ওজু বা গোসল সম্পন্ন করা চাই।
ষ    পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় শান্ত, কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নামাজ আদায় করা। মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটায় এমন কোনো কিছু সামনে না রাখা।
নামাজ অবস্থায় করণীয়
ষ    নামাজে তাড়াহুড়া না করা। আমি বিশ^জগতের প্রভু সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হচ্ছিÑ এটা মনে রেখে ধীর-স্থিরভাবে নামাজ সম্পন্ন করা।
ষ    নামাজের প্রতিটি ধাপÑ যেমন রুকু, সিজদা সঠিকভাবে আদায় করা।
ষ    নামাজে নিজের মস্তক অবনত রাখা এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখা।
ষ    নামাজে কী আয়াত পড়ছিÑ তা অনুধাবন করার চেষ্টা করা। কারণ আয়াতের অর্থ বুঝে পড়লে তা মনোসংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সে জন্য কিছু বহুল পঠিত সুরা এবং দোয়ার বাংলা অনুবাদ মুখস্থ করে নেওয়া। নামাজে মনঃসংযোগের জন্য এটি অনেক গুরুত্ব রাখে।
ষ    নামাজ পড়ার সময় মাথায় এ চিন্তাও রাখা যেÑ হয়তো বা এ নামাজই আমার জীবনের শেষ নামাজ। অতএব জীবনের শেষ নামাজ কি মনোযোগের সঙ্গে পড়ব না?
ষ    নামাজের মধ্যে মনোযোগ ছুটে যেতে চাইলে কল্পনা করা যে, আমি পুলসিরাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। নিচে জাহান্নামের ভয়ানক আগুন, সামনে জান্নাত আর ওপরে মহান আল্লাহ আমাকে দেখছেন। এ অবস্থায় কি মনোযোগ ছুটে যাওয়া সম্ভব?
সবচেয়ে বড় কথা হলো, মনে করতে হবেÑ আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গেই কথা বলছি, তবেই নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা আসবে। হাদিসে জিবরিলে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি এমনভাবে ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। আর তুমি যদি আল্লাহকে না-ও দেখ তবে আল্লাহ তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।’ (মুসলিম : ৮)