সীতাকুণ্ডে চাষ হচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের সুপার ফুড চিয়া সিড

সীতাকুণ্ডে চাষ হচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের সুপার ফুড চিয়া সিড
সীতাকুণ্ডে চাষ হচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের সুপার ফুড চিয়া সিড

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

মধ্য আমেরিকার ও ইউরোপের সুপার ফুড চিয়া সিড। ব্যাপক পুষ্টি ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ এই খাদ্যটির প্রথম চাষেই সফলতা পাওয়ায় দারুণ খুশি সীতাকুণ্ডের কৃষক ও কৃষি বিভাগ । আর তাই আগামীতে এই ফসল পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন সম্পৃক্তরা ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় , চিয়া বীজ হল সাধারণত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাদ্যবস্তু। যেগুলো মানব শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী । এটি মূলত একধরনের শস্য দানা। চিয়া সীডের আদি নিবাস মেক্সিকোতে হলেও ক্যালিফোর্নিয়া এবং ব্রিটেনে এটি বেশ জনপ্রিয়। মরুভূমির সালভিয়া হপ্পনিকা ( এটা উদ্ভিদ শ্রেনীর নাম) শ্রেণীর উদ্ভিদ থেকে চিয়া সীড এসেছে। চিয়া সীডের স্বাদ অনেকটা পুদিনা পাতার মতো । চিয়া সীড সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে একটির বর্ণ কালো অন্যটি বর্ণ শ্বেত। ছোট আকৃতির এই বীজের খাদ্যমান এবং পুষ্টি উপাদান বেশ উচ্চমাত্রার।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় , চিয়া সীডে রয়েছে ওমেগা-৩ জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড । এটি হার্টের পক্ষে খুব উপকারী । এটি রক্তে HDL cholesterol বাড়ায় যা শরীরের জন্য ভালো। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে প্রোটিন ও ফাইবার,  রয়েছে আয়রন এবং ক্যালসিয়ামও । এক আউন্স চিয়া সীডে রয়েছে প্রায় ১১ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৮.৫ গ্রাম ফ্যাট, ১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (যার মধ্যে ১১ গ্রাম হল ফাইবার)। দৈনিক এক আউন্স চিয়া সীড খেলে ১৮% কালসিয়ামের চাহিদা, ২৭% ফসফরাসের চাহিদা এবং ৩০% ম্যাঙ্গানিজের চাহিদা পূরণ হতে পারে বলে জানা যায় ।

উপজেলা কৃষি অফিস জানান , অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে খায়না, সেক্ষেত্রে এই চিয়া সীড খুবই উপকারী। চিয়া সীডের সবচেয়ে ভাল দিক হল আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন খাবারের সাথে একে যোগ করে এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন। আপনি এটি সালাদ বা জুসের সাথে যোগ করতে পারেন। ওটস এর সাথে যোগ করে খেয়ে নিতে পারেন সকালের নাস্তায়। তবে রান্না সরাসরি যোগ না করার ভাল। বরং আপনি চাইলে রান্না করা পছন্দের খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন সুপার ফুড চিয়া সীড।

সীতাকুণ্ড কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায় ,মধ্য আমেরিকার ও ইউরোপের মরুভূমি অঞ্চলে ব্যাপক পুষ্টি ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ ফসল হিসেবে চিয়া সিডের দারুণ চাহিদা রয়েছে। চিয়া সিডের বীজ দেখতে বাদামি, কালো ও সাদা রঙের। এর গাছটি আকারে ছোট এবং ফসল দেখতে অনেকটা তিলের মতো। এতে ব্যাপক পুষ্টি ও ঔষধি গুণ রয়েছে। এ কারণে পুষ্টিবিদরা এটিকে সুপার ফুড বলতে ভালোবাসেন। সারাবিশ্বে চিয়া সিড চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে এর দারুণ চাহিদা থাকলেও আমাদের দেশে এখনো এটির তেমন পরিচিতি লাভ হয়নি। তবে এবার সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. সলিম উদ্দিন প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে চিয়া সিড চাষ করেছেন। এ বিষয়ে কথা হয় তার সাথে।

কৃষক সলিম উদ্দিন বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আমি পরীক্ষামূলকভাবে ৪ শতক জমিতে চিয়া ফিডের বীজ বপন করেছি। এতে ফলন খুব ভাল হয়েছে। সামনে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ফসল কাটা শুরু হবে।

তিনি বলেন, বিদেশের মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার মরুভূমিতে এ ফসল ভালো জন্মায়। তবে আমাদের দেশে এ ফসল হবে কিনা তা নিয়ে আমার সংশয় ছিল। পরে জানলাম আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় এ ফসল হতে পারে। তাই চাষ করলাম। প্রথম চাষেই ভালো ফলন হয়েছে। এখন ক্ষেত বেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে। এপ্রিলে ফসল তুললে লাভবান হবো বলে আশা করছি।

তিনি আরো বলেন যেহেতু ফলন ভালো হয়েছে, আগামীতে আরো ব্যাপক হারে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার ইচ্ছে আছে। গন্ধবিহীন ও পুষ্টিকর খাবারটি পরিবারের যে কেউ খেতে পারবে। সেই প্রাচীনকাল থেকে চিয়া সিডের প্রচলন রয়েছে। এটি পানিতে ভেজালে ফুলে কিছুটা বড় হতে পারে। খাবার হিসেবেও সুস্বাদু, রূপচর্চায় ও এর কোনো তুলনা নেই। ৩০ মিনিট সময়ে কুসুম কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে ঠাণ্ডা করে রাতে খাওয়ার শেষে ও সকালে খালি পেটে পানিসহ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। শরীর ভালো থাকে। সপ্তাহে ৪ দিন অথবা ৭ দিনই চিয়া সিড খাওয়া যাবে। এছাড়া রমজানে শরবতের সাথে মিশিয়ে অথবা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় খাবারটি খাওয়া যায়। এতে ত্বক ও চুল সুন্দর থাকে।

এদিকে, সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবীবুল্লাহ বলেন, চিয়া সিড ইউরোপের মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার মরুভূমি অঞ্চলে ঔষধিগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ এ গাছ বেশি জন্মায়। ৯০ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা সম্ভব হয়। বাংলাদেশে এটি এখনো তেমনভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। এবার সীতাকুণ্ডে প্রথম চাষ হয়েছে। এটি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। ভাবতেই ভালো লাগছে ইউরোপের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের মাটিতে বেগুনি রঙের ফুলে ফুলে মাঠে দোল খাচ্ছে চিয়া সিড। এতে কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি পুষ্টিগুণ আছে বলে জানান তিনি ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;