সরকারকে ৩২ কোটি টাকা গচ্চা টাকা দিতে হলো খালেদার প্রতিহিংসার কারণে : ৪ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

সরকারকে ৩২ কোটি টাকা গচ্চা টাকা দিতে হলো খালেদার প্রতিহিংসার কারণে : ৪ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসার কারণেই দেড় যুগ আগে চুক্তি করেও নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ কোম্পানির কম্পিউটার না নেওয়ায় সরকারকে ৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছিল । শুধু বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকের (বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে) সঙ্গে কোম্পানির নামের মিল থাকায় খালেদা জিয়া ওই কাজ করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী (১৯৯৬-২০০১)  মেয়াদে তার সরকারের সময় কম্পিউটারের ওপর সব ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে কম্পিউটার শেখানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরেন।

মেয়াদের শেষদিকে নেওয়া ওই প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখানে একটা দুঃখজনক ঘটনা না বলে পারছি না। আমরা চাইলাম কম্পিউটার আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েদের দেব। আমার আগ্রহ দেখে নেদারল্যান্ডস গভর্নমেন্ট এগিয়ে এলো। তারা আমাকে বলল তারা আমাদের দেবে অর্ধেক দামে, অর্ধেক তারা অনুদান দেবে, অর্ধেক দাম আমরা দেব। সেভাবে ১০ হাজার কম্পিউটার তারা আমাদের দেবে। আমাদের সঙ্গে অন্য সংস্থাও এলো। তারাও অর্থ সহায়তা দিল। এই কম্পিউটার কিনব বলে নেদারল্যান্ডস সরকারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেল। তারা সব কিছু দেবে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেল, টাকাপয়সা দিয়ে দেওয়া হলো। এর কিছুদিন পরই ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলে সরকারে আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল হচ্ছে টিউলিপ। টিউলিপ ফুলটা ওদের দেশে খুব ভালো হয়। খালেদা জিয়াকে বুঝালো আমরা যে কোম্পানির (কম্পিউটার) কিনব, সেই কোম্পানির নাম টিউলিপ। এই টিউলিপ নাম নিয়ে হলো বিভ্রান্ত। কী বিভ্রাট? সেটা হলো খালেদা জিয়াকে বোঝানো হলো যে শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ, নেদারল্যান্ডসের ওই কোম্পানি, ওটার নামও টিউলিপ। যেহেতু এই কোম্পানির নাম টিউলিপ কাজেই ওদের থেকে কম্পিউটার নেওয়া যাবে না। শুধু এখানে অপরাধটা হলো শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ আর নেদারল্যান্ডসের কোম্পানির নাম টিউলিপ। সে জন্য সেটা বন্ধ করে দিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করল। সেই মামলায় বাংলাদেশ হারল। ১০ হাজার কম্পিউটার তো গেলই, ৩২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও দিতে হলো। এক নামের প্রতি খালেদা জিয়া প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বাংলাদেশ ৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিল। আর টিউলিপকে যে টাকাটা আমরা দিয়েছিলাম তাও গেল। এভাবে সব লোকসান হলো। বাংলাদেশকে আমরা যতটুকু এই ডিজিটালাইজড করার ব্যবস্থা বা কম্পিউটার শেখানোর ব্যবস্থা করে গিয়েছিলাম সেটা ওখানেই বলতে গেলে থেমে গেল।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সৌরবিদ্যুৎ সুবিধার ব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, কালিয়াকৈর, গাজীপুরে নির্মিত ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার , চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কাপ্তাই লেকে নির্মিত ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরী (রিসার্চ ভেসেল) এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৫টি নতুন জাহাজ উদ্বোধন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনে সন্তোষ প্রকাশ করে আশা ব্যক্ত করে বলেন, এসব প্রকল্প দেশের জনগণের বিশেষ করে প্রকল্প আওতাধীন স্থানীয় জনগণের জীবন-মানের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সামাদ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য দিক এবং পৃথক ভিডিওচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করেন।

২০০৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণার কথা স্মরণ করে বিএনপির সাবেক এক মন্ত্রীর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছিয়ানব্বই সালে যখন সরকারে এসেছিলাম তখন দেখতাম কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করে না। মোবাইল ফোন তো কারও হাতে ছিলই না। বিএনপি সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন তার মোবাইল ফোনের ব্যবসা ছিল বলে ওই একটা কোম্পানিই ব্যবসা করত। বাংলাদেশে আর কোনো কোম্পানি ব্যবসা করতে পারবে নাÑ এটা একটা অলিখিত অঘোষিত ঘটনা। তার সেই মোবাইল ফোনটা বিশালাকারের এক ফোন..আর সেটা শুধু ঢাকা-চট্টগ্রামে। কারণ ওই ভদ্রলোকের বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম। ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যেই সংযোগ ছিল আর কোথাও ছিল না। এই ধরনের একটা অবস্থা ছিল। সেই সময় বাংলাদেশে একমাত্র মোবাইল ফোন অপারেটর ছিল সিটিসেল, যার অন্যতম মালিক ছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান। দেনার দায়ে ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় সিটিসেল। ছিয়ানব্বই সালে সরকারে এসে মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি কম্পিউটার..কম্পিউটার কেউ তখন ব্যবহারই করত না। অনেক অফিসে একটা ডেক্সটপ সাজিয়ে রাখা হতো। কিন্তু কেউ ওটায় হাত দিত না এমন একটা অবস্থা ছিল।

শেখ হাসিনা এ সময় নিজের ছেলে বর্তমানে তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শের কথাও জানান। আমাকে সজীব ওয়াজেদ জয় বলল, তুমি যদি এটা (ডিজিটাল বাংলাদেশ) করতে চাও মা, তাহলে (কম্পিউটার ও কম্পিউটার সরঞ্জামের ওপর) ট্যাক্স কমিয়ে দিতে হবে। এটার দাম কমাতে হবে এবং শিক্ষার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০০৯ সালে আবার সরকারে আসার পর আমরা উদ্যোগ নিলাম। আজকে সারা বাংলাদেশে আমরা যেটা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব সত্যিই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।