সীতাকুণ্ডের হাজার হাজার নলকূপে পানি নেই, হু হু করে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর

সীতাকুণ্ডের হাজার হাজার নলকূপে পানি নেই, হু হু করে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর
সীতাকুণ্ডের হাজার হাজার নলকূপে পানি নেই, হু হু করে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডে প্রায় ১১ হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যক্তিগত চার হাজারের পাশাপাশি অকেজো হয়ে আছে সরকারিভাবে স্থাপিত আরও সাত হাজার নলকূপ। এমনকি অনেক স্থানে গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। যা ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে। হু হু করে নেমে যাচ্ছে নামছে পানির স্তর । ফলে পানি সঙ্কটে দিনযাপন করছেন উপজেলার লাখো মানুষ। অবস্থা প্রকট হওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকায় প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন লোকজন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত দুই দশক ধরে সীতাকুণ্ডে পানির স্তর ক্রমশ নেমে যাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফসলি জমি থেকে বসত বাড়ি পর্যন্ত সর্বত্রই। ইতোমধ্যেই এলাকার বহু টিউবয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। এমনকি যারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে গভীর নলকূপ স্থাপন করছেন তাদের কলেও অনেক সময় পানি মিলছে না।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র পানি সংকটের কারণে উপজেলায় প্রায় ১১০০০ হাজার নলকূপ অকেজো হয়ে আছে। এমনকি কুয়ো, গভীর নলকূপেও ঠিক মতো পানি মেলে না। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, সীতাকুণ্ডে পানির স্তর অনেক নিচে। চারটি ইউনিয়ন সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ডে কিছুটা কাছে। তাও সেখানে বহু নলকূপে পানি উঠে না। এর কারণ, নলকূপগুলো যখন স্থাপন করা হয়েছিলো তখন ৪০-৫০ ফুট নিচে পানি পাওয়া যেত, এখন পানির স্তর নেমে গেছে ১০০-১২০ ফুটেরও নিচে। ফলে আগে স্থাপন করা অধিকাংশ কল এখন অনেকটা অকেজো। তবে পানির সবচেয়ে বেশি দুরবস্থা পৌরসভাসহ সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ইউনিয়নে। পৌরসভাতে এখন ১৫০ ফুটেরও বেশি নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। ফলে এখানেও টিউবয়েলগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। সাব মার্সিবল টিউবয়েল কিংবা ৪-৫’শ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপন করলেই পানি পাওয়া যায়। আশংকার কথা হলো এই স্তর এ বছর যতটুকু নিচে নামছে কয়েকবছর পর দেখা যায় আরো অনেক নিচে নেমে গেছে। যেভাবে পানির স্তর নামছে তাতে কতবছর এটি ব্যবহার করা যাবে তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান আরো বলেন, এখানে পানি সংকটের আরেকটি বড় কারণ এখানে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান পানি তুলছে। তারা অনেক শক্তিশালী মোটর বসিয়ে মাটির গভীর থেকে বিপুল পরিমাণ পানি উত্তোলন করায় আশপাশের গ্রামগুলোতে পানি সংকট হয়। 

সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ইউনিয়নের বাশিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত সর্বত্রই এখন তীব্র পানি সংকট। এ পানি সংকটের নানামুখী সমস্যার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভেীরা।

উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফিরোজ ভূঁইয়া বলেন, এলালায় এখন টিউবয়েল স্থাপন করাই কঠিন হয়ে গেছে। মাটির অনেক গভীরে গিয়ে পানি মেলে না। ফলে আগে যেসব টিউবয়েল স্থাপন করা ছিলো সেগুলোর বেশিরভাগেই পানি উঠে না। আবার নতুন করে টিউবয়েল স্থাপন করতে গেলে মাটির অনেক গভীরে গিয়ে তবেই পানি পাওয়া যায়। এ জন্য যে বিশাল ব্যয় হয় তা করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই।

সীতাকুণ্ড পৌরসদরের বাসিন্দা মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। আগে আমাদের বাড়িতে যে টিউবয়েলটি ছিলো এখন সেটিতে পানি উঠছে না। বাড়ির নারীরা দূরের অন্য বাড়ি গিয়ে পানি আনতে হয়। তাই এখন আবার একটি টিউবয়েল স্থাপন করতে গিয়ে দেখি ১৩০ ফুট যাবার পরও পর্যাপ্ত পানি নেই!

এসব প্রসঙ্গে কথা হয় সীতাকুণ্ডের ৯ নং ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীনের সাথে। তিনি বলেন, এলাকার একাধিক বাড়ির টিউবয়েলেই এখন পানি উঠছে না। প্রায় পুরো ইউনিয়নেই পানির জন্য হাহাকার চলছে। তাছাড়া তার ইউনিয়নেই বেশ কয়েকটি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী যন্ত্র বসিয়ে ২ হাজার ফুট গভীরে গিয়ে বোরিং করে পানি তুলছে। এর ফলে চারিদিকে পানির জন্য হাহাকার। এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে শুকনো মৌসুমে কোন পানি পাওয়া যাবে না।

খালেদ/ পোস্টকার্ড;