অযত্ন অবহেলায় দেশের একমাত্র জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর

অযত্ন অবহেলায় দেশের একমাত্র জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর
অযত্ন অবহেলায় দেশের একমাত্র জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর

জাহেদুল কবির।।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় সংলগ্ন ১ দশমিক ২৫ একর জায়গায় ১৯৬৫ সাালে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৪ সালের ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন এবং সেই থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপন, সাংস্কৃতিক আচার এবং ঐতিহ্যের নমুনা সংরক্ষণই ছিল জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য। বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জাদুঘরের কার্যক্রম।

আগের তুলনায় কমেছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। এছাড়া বর্ষা মৌসুম এলে দেয়াল ছুঁইয়ে বৃষ্টি পানি পড়ে বলে জানা গেছে। ফলে অনেক মূল্যবান ও দুর্লভ জিনিসপত্র পানিতে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবন সংস্কারের জন্য প্রত্বতাত্বিক অধিদপ্তরকে একাধিকবার চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

জাদুঘরের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে চারটি গ্যালারিসহ ১১টি কক্ষ বিশিষ্ট জাদুঘরের প্রদর্শনীগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টিসহ দেশের ২৬টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির জীবনধারা ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। দেশের এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিগুলো রয়েছে– চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, চাক, তংচঙ্গ্যা, মুরং, খুমি, গারো, বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, মনিপুরী, খাসিয়া, ওরাওঁ, হাজং, মান্দাই, ডলু, হোদি, বোনা, পোলিয়া, কোচ, রাজবংশী, সাঁওতাল, মুন্ডা ও হো। এছাড়া পাকিস্তানের পাঠান, সিন্ধি, পাঞ্জাবী, কাফির, সোয়াত, ভারতের আদি, ফুওয়া, মুরিয়া, মিজো, কিরগিজস্থানের কিরগিজ, অস্ট্রেলিয়ার অষ্ট্রাল এবং দুই জার্মানীর মিলন প্রাচীরের ভগ্নাংশের কিছু নির্দশন জাদুঘরে রক্ষিত রয়েছে।

জাদুঘরের প্রবেশ পথে রয়েছে টিকিট কাউন্টার, তিনটি মানচিত্র এবং ইতালির চিত্রশিল্পী ক্যারোলীর ১২টি দেয়াল চিত্র। দেয়াল চিত্রে অর্ধেক বাংলাদেশের আদিবাসী ও পাকিস্তানী আদিবাসীদের বিভিন্ন জীবনযাত্রার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ত্রিপুরা ও পাঞ্জাবী নারীর দুটি মডেল, ম্রোদের জীবনযাত্রার ধরণসহ ধর্মীয় গো–হত্যার উৎসবের ডায়রোমা, বাংলাদেশের বিভিন্ন আদিবাসীসহ পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর অলংকার, বাংলাদেশের পার্বত্য জেলার আদিবাসীদের বাসগৃহের নমুনা এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রকাশিত বিভিন্ন বই ও ভিউকার্ডের শোকেইজ স্থান পেয়েছে।

জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপ–পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, জাদুঘরের ভবনটি অনেক পুরনো। এটি সংস্কার করা প্রয়োজন। তবে আমরা ইতোমধ্যে জাদুঘরের লাইব্রেরি সংস্কার করেছি। ভবন সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বরাবর কয়েকবার চিঠি লিখা হয়েছে। অন্যদিকে দশনার্থী আকর্ষণে আমি কাজে যোগদান করার পর বিভিন্ন স্কুলে পরিদর্শন করেছি। যাতে শিক্ষার্থীরা জাদুঘরে এসে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বর্তমানে জাদুঘরে জনবলেরও সংকট রয়েছে। আমাদের জনবল থাকার কথা ৩০ জন, কিন্তু কাজ করছেন ২১ জন। এটিও একটি সমস্যা।

উল্লেখ্য, আজ আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামসের (আইসিওএম) এর আহ্বানে ১৯৭৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আইসিওএম। এর সদস্য হিসেবে বর্তমানে ১০৭ দেশের ২৮ হাজার জাদুঘর যুক্ত রয়েছে। এছাড়া ১৯১০ সালের এপ্রিলে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় শরৎকুমার রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’। এই জাদুঘরটি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। এর নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৩ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশে শতাধিক জাদুঘর আছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরই দেশের প্রধান জাদুঘর।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;