আম্ফান দুর্বল হয়ে চট্টগ্রামে আঘাত করতে পারে ,৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

আম্ফান দুর্বল হয়ে চট্টগ্রামে আঘাত করতে পারে ,৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা

ইকবাল হোসেন ।।

সুপার সাইক্লোনে পরিণত হলেও ঘূর্ণিঝড় আম্ফান চট্টগ্রামে অনেকটা দুর্বল আঘাত হানবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। ঘণ্টায় গড়ে ২০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের দিকে এগোতে থাকা সুপার সাইক্লোন আম্ফান দেশের খুলনা বিভাগের সুন্দরবন অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট এলাকায় সর্বোচ্চ গতিতে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতের মধ্যে দিক পরিবর্তন না হলে চট্টগ্রাম অনেকটাই ঝুঁকির বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। তবে আম্ফানের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ গত রাতে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাব থেকে চট্টগ্রাম আনুপাতিকহারে অনেকখানি নিরাপদ। তবে ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আম্ফান সুপার সাইক্লোনে রূপ নিলেও উপকূলে আঘাতের সময় এটি সম্ভবত সুপার সাইক্লোন থাকবে না। এটি বড় আকারের বাতাসের উচ্চ গতি সম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে। আঘাতের সময় দেশের দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ১০০-১৫০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। কিন্তু চট্টগ্রামে প্রভাব তেমন থাকবে না। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হবে। এতে তাপমাত্রাও কমে আসবে।’

এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো চট্টগ্রামেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সারাদিন খড়তাপে পুড়িয়ে সন্ধ্যার পর মুষলধারে বৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ও করোনা আতংকের মধ্যেও মানুষের মাঝে স্বস্তি দিয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলাগুলোর লোকজনকে সতর্ক করতে ইতোমধ্যে মাইকিং শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে অধিকাংশ জায়গায় দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়াসহ সাময়িকভাবে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা ২.৩ সে. কমতে পারে। দক্ষিন দক্ষিন-পূর্ব দিক হতে ঘণ্টায় ১৫-২০ কি. মি. বেগে যা অস্থায়ীভাবে দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ৬০-৮০ কি.মি. বেগে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ গতকাল রাত ৯টার বুলেটিনে বলা হয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ’আম্ফান’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। গতকাল রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬১০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার বিকাল কিংবা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২০০ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। আম্ফানের প্রভাবে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেত সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কঙবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

তবে ঘূর্ণিঝড় জনিত জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মঙ্গলবার রাত ৯টার বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার বেগও থাকবে অতিগতি সম্পন্ন। আবহাওয়ার বুলেটিনে ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতায় উল্লেখ করা হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০-১৬০ কিঃ মিঃ বেগে দম্‌কা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসময় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।