এবার গুজব রটনাকারীদের টার্গেটে ‘আলোচিত’ পুলিশ কর্মকর্তারা -আলমগীর হোসেন

এবার গুজব রটনাকারীদের টার্গেটে ‘আলোচিত’ পুলিশ কর্মকর্তারা -আলমগীর হোসেন
এবার গুজব রটনাকারীদের টার্গেটে ‘আলোচিত’ পুলিশ কর্মকর্তারা -আলমগীর হোসেন

বিভিন্ন সময়ে নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণে ‘আলোচিত’ পুলিশের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক হারে গুজব চালানো হচ্ছে। যেখানে মূলত বলা হচ্ছে, পুলিশের ওইসব কর্মকর্তা নাকি দেশ ছেড়ে পালানোর উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কিছু সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার নামও বলা হয়েছে। তবে এ ধরনের তথ্যের কোনোই ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতর এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সময়ের আলোকে জানিয়েছেন, দেশত্যাগ কিংবা বিদেশ পাড়ি জমানোর চেষ্টার সব তথ্যই ভুয়া।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বেসরকারি একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলের লোগো ব্যবহার করে কিংবা হরেকরকম নামে আইডি ও পেজ খুলে তাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টার কথা বলা হচ্ছে। যে তথ্যগুলো ইতিমধ্যেই ব্যাপক হারে ভাইরাল হয়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে প্রায় সবখানেই হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা। কেননা এসব তথ্যের সঙ্গে যেসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন সময়ে ‘আলোচিত-সমালোচিত’। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কিছু পুলিশ কর্মকর্তার নাম ধরেই সমালোচনা করে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিতেও শোনা যায়। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ অভিযোগ তুলে অন্তত ২০০ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথিত বিদেশ পাড়ি জমানোর চেষ্টার গুজব রটানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. মনজুর রহমান বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো মহল ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের টার্গেট করে মিথ্যাচার বা গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে যাওয়ার কথা বলে যে গুজব রটানো হয়েছে সেগুলো অনেক আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিল। কিছু দিন ধরে নতুন করে পুরোনো গুজবকেই সামনে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশের সাইবার ইউনিট কাজ শুরু করেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যারা এসব ছড়াচ্ছে বা যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশের এক শ্রেণির কর্মকর্তাকে টার্গেট করে গুজব রটানো হচ্ছে। এর নেপথ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর লোকজন জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম বলা হচ্ছে তাদের মধ্যেও কতিপয় কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন। মূলত ‘আলোচিত-সমালোচিত’ এসব পুলিশ কর্মকর্তাকে সামনে রেখে আরও অনেক কর্মকর্তার নাম জুড়ে দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে।

মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দেশ ছেড়ে ‘পালানোর’ গুজব রটিয়ে যেসব তথ্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে সেগুলো অনেক সময় সাধারণ মানুষ বিশ্বাসেও নিচ্ছে। কোনো ধরনের সরকারি সূত্র বা ভিত্তি না থাকলেও বিভিন্ন মহলেও এসব নিয়ে জোরালো আলোচনা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, গুজবকে গুজব হিসেবেই নিতে হবে। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। স্বাধীনতাবিরোধী চক্রগুলো সবসময়ই এ জাতীয় মিথ্যাচারে সক্রিয়। ফলে সাধারণ মানুষেরও এ ধরনের গুজবে কান দেওয়া উচিত নয়। তবে জাতীয় নির্বাচন যত সামনে আসছে এ ধরনের মিথ্যাচার বা গুজব ততই বাড়বে। পুলিশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বা বাহিনী। সে কারণেই পুলিশকে টার্গেট করা হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক আরও নানা চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। তাই পুলিশকে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি রাখতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা দেশের জন্য শপথ নিয়ে চাকরি শুরু করেছেন। ফলে গুজবসহ সব ধরনের চ্যালেঞ্জ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে তাদের পবিত্র দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করতে হবে। বিশ^াস করি, তারা সেটা করবে।

পুলিশের মনোবল ভাঙা যাবে না মন্তব্য করে সাবেক এই পুলিশ প্রধান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশে যারা নেতৃত্বে আছেন তাদেরও এখন বেশি বেশি অধস্তনদের নিয়ে বসতে হবে। নির্বাচন এলে নানা ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। ফলে অধস্তন কর্মকর্তা ও সদস্যদের উৎসাহ ও সাহস জোগাতে হবে বলে জানান তিনি।

লেখক : ক্রাইম রিপোর্টার , দৈনিক সময়ের আলো । 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;