চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৯৩ বছর পর সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট

আইসিইউসহ পুরো হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৯৩ বছর পর সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৯৩ বছর পর সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট

ইমাম হোসাইন রাজু ।। 

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে । যাতে হাসপাতালের আইসিইউসহ পুরো হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে হাসপাতালের আইসিইউতে নবনির্মিত প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি ৩০ শতাংশের কাজ শেষ হলে পুরো হাসপাতালেই এ প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টটি বসানো হয়েছে সরকারিভাবেই। তবে এতে অক্সিজেন লাইন সংযোগের বিষয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পায় হাসপাতাল। বাকি সিংহভাগই সরকারিভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে। ১৩ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার এ প্ল্যান্ট থেকে হাসপাতালে ১৮০টি লাইন নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ  বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটার ছাড়া বাকি সবগুলোতেই অক্সিজেন লাইন দেয়া হবে। ইতোমধ্যে আইসিইউতে লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭০ শতাংশের কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ কাজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা যাবে। এরপর পুরোপুরিই চালু করা হবে এটি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২২ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই প্ল্যান্ট নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্যাদেশে উল্লেখ করা হয়, ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের উপযুক্ত প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। তবে প্ল্যান্টের সক্ষমতা অবশ্যই ২০ হাজার লিটারের হতে হবে যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করা যায়।

এর আগে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় আড়াইশ শয্যার এ জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি শুরু করা হয়। চিকিৎসা সেবা চালু ও রোগীদের ভর্তি করানো হলেও শুরু থেকেই আইসিইউ ও অক্সিজেন সংকটে পড়তে হতো রোগীদের। যদিও পরবর্তীতে দশটি আইসিইউ বসানোর পর অক্সিজেন নিয়ে চরম সংকটে পড়তে হয় চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। একপর্যায়ে সিলিন্ডার দিয়ে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা হলেও প্রয়োজনে তুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডার কম থাকায় অনেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে এ অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু হওয়ায় রোগীরা আরও বেশি সুফল পাবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুরু থেকেই অক্সিজেন নিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর ফলে এ সমস্যা দূর হবে। আগে রোগীদের সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দিলেও এখন হাই ফ্লো ন্যাজেল দিয়ে ৬/৭ গুণ বেশি অক্সিজেনর সরবরাহ করা যাবে। এতে করে রোগীরা অনেক বেশি সুফল পাবে বলেও অভিমত এ চিকিৎসকের।’

উল্লেখ্য ১৯২৭ সালে তৎকালীন পূর্ববাংলার গভর্নর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এটি তৎকালীন বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনগণের জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন নির্ভরযোগ্য হাসপাতাল হিসেবে সেবা প্রদান করে আসছিল। কিন্তু এতদিন ৯৩ বছর পুরোনা এ হাসপাতালে এতদিন আইসিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিল না। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণার পর তাতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে।