জশনে জুলুসের ৫০তম আসরে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল

জশনে জুলুসের ৫০তম আসরে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল
জশনে জুলুসের ৫০তম আসরে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুসের ৫০তম আয়োজন শেয হয়েছে।

এসময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা নবীপ্রেমী মানুষের নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, নারায়ে রিসালত ইয়া রাসূলাল্লাহ, হামদ, নাত ও দরুদে মুখরিত ছিল নগরীর অনেকাংশ।

আজ রবিবার (৯ অক্টোবর) সকালে নগরীর ষোলশহরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে জুলুস শুরু হয়। এতে অংশ নিতে এদিন ভোর থেকে নবীপ্রেমী মানুষরা চট্টগ্রামে জোড় হয় ।  


আর তা পরবর্তীতে বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জাপুল, কাতালগঞ্জ, চকবাজার অলিখাঁ মসজিদ, প্যারেড মাঠের পশ্চিম পাশ, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারি, খাস্তগীর স্কুল, ডা. এমএ হাশেম চত্বর (জামালখান), আসকার দীঘির উত্তর পাড়, কাজীর দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর হয়ে পুনরায় মাদ্রাসার মাঠে আসে জুলুস।

আওলাদে রাসুল, গাউসে জামান হজরতুলহাজ আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ’র (মজিআ) নেতৃত্বে শুরু হওয়া জুলুসের প্রধান অতিথি আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ) এবং বিশেষ অতিথি আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ (মজিআ)।

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন, জুলুসে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) তিন হাজার, গাউসিয়া কমিটির নেতা-কর্মী ও জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র মিলে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন। তা ছাড়া যথারীতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া জুলুসের রোডম্যাপের মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা করেন স্বেচ্ছাসেবক ও হুজুর কেবলার ভক্তরা। জুলুসকে ঘিরে মুরাদপুর, বিবিরহাট, মাদ্রাসা এলাকায় শত শত টুপি, মাস্ক, আতর, সুরমা, তসবিহ, পাঞ্জাবি, ইসলামী বই, খাবার দোকান বসেছে। জুলুস শেষে দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় মাহফিল। এরপর জোহরের নামাজ শেষে দোয়া ও আখেরি মোনাজাত করা হয় ।

গাউসিয়া কমিটি, আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন তোরণ, সড়কদ্বীপ, সড়ক বিভাজক সাজিয়েছে। 

জুলুসের মেহমানদের শরবত, চকলেট, খেজুর, জিলাপি, জুস বিতরণ করছেন অনেক ভক্ত। নারী, শিশুরা বিভিন্ন ভবনের ছাদ, জানালা দিয়ে স্বাগত জানান জুলুসকে।

হুজুর কেবলার জন্য বিশেষভাবে সাজানো গাড়িতে ছিলেন, আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শামসুদ্দিন, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ জশনে জুলুসের আয়োজন করা হচ্ছে ১৯৭৪ সাল (১৩৯৫ হিজরি) থেকে। আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (র.) নির্দেশনা ও রূপরেখা অনুসারে দেশে সর্বপ্রথম জশনে জুলুস আত্মপ্রকাশ করে। সর্বপ্রথম জুলুস চট্টগ্রামের কোরবানিগঞ্জ বলুয়ারদীঘি পাড়ের খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয়। আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় দেশের প্রথম জশনে জুলুসে নেতৃত্ব দেন আনজুমান ট্রাস্টের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ নূর মোহাম্মদ আল কাদেরী। আর ১৯৭৬ সালে তৈয়্যব শাহ (র.) পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ সফরে আসেন। এরপর তিনি নিজেই জুলুসে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তিনি প্রতি বছর ৯ রবিউল আউয়াল ঢাকা এবং ১২ রবিউল আউয়াল চট্টগ্রামে আয়োজিত জশনে জুলুসে নেতৃত্ব দেন। এবার হিজরি বর্ষ অনুযায়ী জুলুসের ৫০তম আয়োজন। তাই জুলুসকে ঘিরে চট্টগ্রাম সেজেছে বর্ণিল সাজে।

খালেদ / পোস্টকার্ড;