ফাইজারের টিকা ৯০% কার্যকর, টিকা নিয়ে যা জানা দরকার

ফাইজারের টিকা ৯০% কার্যকর, টিকা নিয়ে যা জানা দরকার
ফাইজ়ারের টিকা ৯০% কার্যকর, ফাইজারের টিকা নিয়ে যা জানা দরকার

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

তৃতীয় ধাপের অন্তর্বর্তী ট্রায়ালে ৯০ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে তাদের তৈরি করোনা টিকা। সোমবার এই খবর জানাল ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ফাইজার। ফলে কথা মতো ডিসেম্বরের মধ্যেই সেই টিকা বাজারে আনতে আর বিশেষ বাধা রইল না বলেই মত কর্তৃপক্ষের। 

বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করার মধ্যেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়ে সুখবর মিলেছে। জার্মান সংস্থা বায়োএনটেক-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এমআরএনএ প্রযুক্তির সাহায্যে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে আমেরিকার সংস্থা ফাইজার। দাবি করা হচ্ছে, তারা যে টিকার চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাতে নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাটি ৯০ ভাগেরও বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে যেসব টিকার পরীক্ষা চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে, তার মধ্যে থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের পক্ষ থেকেই এমন সুখবর মিলল। তবে কোনো টিকার চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষার একেবারেই প্রাথমিক খবর এটি, আর টিকাটি কতটা ভালোভাবে কাজ করবে তাও জানা যায়নি। তাছাড়া আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করে বলা উচিত, সেটি হল- আগামী কয়েক মাসেও এই টিকা বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং, এত দ্রুত আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে এই টিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখা দরকার। 

টিকাটি ৯০ ভাগ কার্যকর বলে যে দাবি করা হয়েছে, তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার, যারা টিকাটি পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে থেকে খুব কমজনই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। টিকা প্রস্তুতকারীদের জরুরি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে টিকা ৫০ ভাগ কার্যকার হবে, এমন একটি বাধ্যবাধকতা ঠিক করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ-এফডিএ। ফাইজার-বায়োএনটেকের প্রাথমিক তথ্যটি যদি ঠিক হয় এবং মাঠপর্যায়ের প্রয়োগে এর সঠিক প্রতিফলন ঘটে, তাহলে তা নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে বেশিই সুরক্ষা দেবে। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত টিকাগুলোর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা ৪০-৬০% কার্যকর হয়। কারণ এই ভাইরাসটি বছরের পর বছর ধরে রূপ বদলায়। অন্যদিকে হামের দুই ডোজ টিকার কার্যকারিতা ৯৭ ভাগ।

গত মে থেকে চালানো ছোট আকারে কয়েক ধাপের পরীক্ষা আর চলমান চূড়ান্ত ধাপ- কোনো পর্যায়েই টিকা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। ফাইজার-বায়োএনটেক মূলত চার ধরনের টিকা আনার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে শুধু একটির প্রয়োগে জ্বর এবং অবসাদের মতো মৃদু উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। তাছাড়া জরুরি অনুমোদন ও লাখ মানুষকে প্রয়োগের সময় ন্যূনতম ঝুঁকিও যাতে না থাকে, সেজন্য পুরো বিষয়টির ওপর নজর রাখবে এফডিএ এবং সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। ট্রায়ালে যারা অংশ নিয়েছেন তাদেরকেও আরও দুই বছর নজরদারিতে রাখা হবে।

ফাইজারের প্রধান নির্বাহী বলেছেন, বছর শেষ হওয়ার আগেই তারা তিন থেকে চার কোটি টিকা আনতে পারবেন। প্রাথমিক ডোজ এবং তিন সপ্তাহ পর বুস্টারসহ দেড় থেকে দুই কোটি মানুষের জন্য যা যথেষ্ট।

ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা করোনাভাইরাস থেকে বয়স্কদের কতটা সুরক্ষা দেবে তা নতুন তথ্যে পরিষ্কার নয়। তবে যেহেতু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরাও অংশ নিয়েছেন, তাতে করে এই বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে। শিশুদের ওপর টিকা কার্যকার হবে কিনা তা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। প্রথমদিকে এই টিকার ট্রায়াল ১৮ থেকে তার বেশি বয়সীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে আশার কথা হল, সেপ্টেম্বরে তারা ১৬ বছর বয়সীদের ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করে। আর গত মাসে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের নিয়েও কাজ শুরু করেছে।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ১০টি টিকার চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়াল চলছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের সফলতার খবরে কিছুটা হতাশ হতে পারে টিকা তৈরির দৌড়ে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো। কয়েক মাসের মধ্যেও যদি ফাইজারের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন মেলে, তারপরও তা শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষই পাবে ধরে নেওয়া যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সবার জন্য কার্যকর একটি টিকা মিলতে পারে আগামী বছর।

তাছাড়া কোনো টিকা ভাইরাসটির লক্ষণবিহীন সংক্রমণ রোধ কিংবা মানুষকে মারাত্মক কেভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে কিনা, তার কোনো তথ্য এখনও মেলেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা সহজলভ্য হলেও জনস্বাস্থ্যের ওপর থেকে হুমকি না কমা পর্যন্ত মাস্কের ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে।