বিদেশযাত্রীদের করোনা পরীক্ষায় দেরির দায় সিভিল সার্জনকেই নিতে হবে: সুজন

বিদেশযাত্রীদের করোনা পরীক্ষায় দেরির দায় সিভিল সার্জনকেই নিতে হবে: সুজন
বিদেশযাত্রীদের করোনার নমুনা পরীক্ষায় দেরির দায় সিভিল সার্জনকেই নিতে হবে: সুজন

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, অতিরিক্ত ফি দিয়েও যদি কোনো প্রবাসী যাত্রী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পান সেক্ষেত্রে তার ফ্লাইট টিকিটের অফেরতযোগ্য মূল্য ও অন্যান্য আর্থিক ক্ষতির দায় সিভিল সার্জন অফিসকেই নিতে হবে।

রেমিটেন্স যোদ্ধা খ্যাত বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে ভুক্তভোগীদের তীব্র অসন্তোষ, ভুল রিপোর্ট এবং নমুনা পরীক্ষার সনদ বিলম্বের কারণে ফ্লাইট মিসসহ বিভিন্ন অসুবিধার অভিযোগ পেয়ে আজ বুধবার (২৯ জুলাই) জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ হুঁশিয়ারি দেন।

সুজন বলেন, রেমিটেন্স যোদ্ধারাই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিদেশে কর্মরত হাজার হাজার প্রবাসী ছুটি বা বিভিন্ন উপলক্ষে দেশে এসে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সৃষ্ট যোগাযোগ অচলাবস্থার শিকার হয়ে দেশে আটকা পড়েছেন। অচল অর্থনীতিকে সচল করার জন্য মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ কিছু দেশে সীমিত আকারে আকাশ যোগাযোগ চালু করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে আটকেপড়া প্রবাসীদের বিদেশ যাত্রার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে ফ্লাইট চলাচল করতে গিয়ে ভাড়া প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে। এয়ারলাইন্সগুলোর ইকোনমি ক্লাসের টিকিট মূল্যও অফেরতযোগ্য। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক।

সরকার সবকিছু বিবেচনা করে বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ দেশে কয়েকটি বিশেষ নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করে। এতে প্রতিজন যাত্রীকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার বিনিময়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু দুঃজনকভাবে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কেন্দ্রটিতে চরম অব্যবস্থাপনার সঙ্গে দেরিতে রিপোর্ট দেয়ার কারণে অনেকে ফ্লাইট মিসের ফাঁদে পড়ে বিদেশ যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এতে করে রেমিটেন্সযোদ্ধারা আর্থিক ও মানসিক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

সুজন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক করোনার নমুনা পরীক্ষায় অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি প্যাথলজি উচ্চহারের ফি নিয়ে ভুল রিপোর্ট প্রদানের ব্যাপারে সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওই বেসরকারি প্যাথলজি নমুনা পরীক্ষায় নিম্নমানের কিট কিংবা আনাড়ি টেকনিশিয়ান ব্যবহার করছেন কিনা তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান।

তিনি রিপোর্ট প্রদানে আগতদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিভিল সার্জনকে অনুরোধ জানান। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলেন।

এর আগে সুজন সিভিল কার্যালয়ে ঢোকার সময় দেখতে পান ফি জমাদান, নমুনা প্রদান ও রিপোর্ট গ্রহণের কাউন্টারগুলোতে প্রায় শতাধিক লোক একজনের কাঁধের সঙ্গে অন্যজনের কাঁধ ঘেঁষে জটলা করে আছে। নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিসের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর তৎপরতাও দেখা যায়নি। তিনি উপস্থিত সেবা গ্রহণেচ্ছুদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ জানালে প্রায় সবাই সাড়া দেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিদেশগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে করোনা নেগেটিভ সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক। তবে দুর্ভাগ্যবশত বেশ কয়েকজন প্রবাসী যাত্রীর করোনা নমুনা পরীক্ষার সনদ দেরিতে পাওয়া গেছে যে কারণে প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সার্ভার সমস্যার কারণে বিআইটিআইডি মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদের রিপোর্ট অনলাইনে আপলোড করতে পারেনি। ডাটা এন্ট্রি করতে দেরির কারণে এ সমস্যা হয়েছে। এর ফলে বেশ কয়েকজন যাত্রী ফ্লাইট ধরতে পারেনি। বর্তমানে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি প্রতিদিন ২৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করছে এবং এর অতিরিক্ত হলে সে সব নমুনা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া নমুনা পরীক্ষায় ঢাকা থেকে ৪ জন টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিচ্ছে জেনারেল হাসপাতাল যাতে করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই করোনা নমুনা পরীক্ষার সনদ পাওয়া যায়।

নমুনা পরীক্ষার সনদ প্রাপ্তিতে যে সমস্যা ছিল তা কেটে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সনদ প্রাপ্তিতে আর কোনো সমস্যা নেই।

তিনি নমুনা পরীক্ষায় জটলা, সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সুজনের উত্থাপিত প্রস্তাবনাগুলো নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এ সময় আব্দুর রহমান মিয়া, সংগঠনের সদস্যসচিব মো. হোসেন, মোরশেদ আলম, মো. শাহজাহান, সমীর মহাজন লিটন, মনিরুল হক মুন্না, উৎপল দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।