সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডে শ্রমিকের মৃত্যু, প্রশাসনকে না জানিয়ে দাফনের চেষ্টা 

সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডে শ্রমিকের মৃত্যু, প্রশাসনকে না জানিয়ে দাফনের চেষ্টা 
সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডে শ্রমিকের মৃত্যু, প্রশাসনকে না জানিয়ে দাফনের চেষ্টা

বিশেষ প্রতিবেদক।।

জাহাজ কাটার সময় সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির ফোর স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে মো. শাহাব উদ্দীন (৩৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় মোশাররফ হোসেন (৩৯) নামে আরও এক শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে জিইসি মোড়স্থ মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আছেন ।

অবশ্য অভিযোগ এসেছে, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবগত না করে স্বাভাবিক মৃত্যু উল্লেখ করে চুপিসারে নিহত শ্রমিকদের মরদেহ দাফন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ফোর স্টার শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। পরে গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরে নিহত শ্রমিকের মরদেহ ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয় পুলিশ।

নিহত শাহাব উদ্দীন সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজী পাড়া এলাকার মৃত সুলতান আহমেদের ছেলে। অপরদিকে আহত মোশাররফ হোসেন নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ থানার চরকরার এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে। তারা দুজনই ইয়ার্ডটিতে কাটারম্যান হিসেবে কাজ করতেন।

জানা যায়, সোমবার (২৯ মে) দুপুরে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জোড়আমতল এলাকায় অবস্থিত ফোর স্টার শিপইয়ার্ডে কাজ করার সময় জাহাজের প্লেটের সঙ্গে নিচে পড়ে যান কাটারম্যান শাহাব উদ্দীন ও মোশাররফ হোসেন। এসময় প্লেটের আঘাতে তারা গুরুতর আহত হন৷ তাদের উদ্ধার করে নগরীর জিইসি মোড়স্থ মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে শাহাব উদ্দীনের মৃত্যু হয়। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা থানা পুলিশকে দুর্ঘটনার বিষয়ে জানায়নি ইয়ার্ডের মালিকপক্ষ। একপর্যায়ে চুপিসারে নিহত শ্রমিকের মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করে দেওয়া হয় এবং তড়িঘড়ি করে দাফনের ব্যবস্থা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।

অভিযোগ উঠেছে, মৃত্যুর ঘটনার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কম টাকা দিতে কাউকে কিছু না জানিয়ে দ্রুততার সাথে দাফন সারছিল ফোর স্টার শিপইয়ার্ডের মালিক নুরুদ্দিন রুবেল। আর এজন্য মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয় স্বাভাবিক মৃত্যুর সনদপত্র। যদিও নিয়মানুযায়ী শিপইয়ার্ডে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্প পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানোর নিয়ম আছে।

জানতে চাইলে কুমিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোর্শেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, দুপুর দুইটায় ঘটনা, শ্রমিকের মৃত্যু হলেও আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। আমি শুনেছি বিকেল পাঁচটায়। তখন দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। পরে পুলিশকে জানানোর পর পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ফোর স্টার শিপইয়ার্ডের মালিকরা শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে লুকোচুরি খেলেছে। তারা কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে মরদেহ দাফন করে ফেলতে চেয়েছিল। আমরা খবর পেয়ে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করি। তিনি আরও বলেন, এমনটা করা ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের মোটেও উচিত হয়নি। নিয়মানুযায়ী দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমে পুলিশকে জানাতে হবে। এরপরের প্রক্রিয়াগুলো অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে পুলিশই সম্পাদন করবে বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফোর স্টার শিপ ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দিন রুবেল   বলেন, আমরা তখন আহতদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। রোগীকে হাসপাতালে নেব নাকি সংশ্লিষ্টদের জানাব? প্রশাসনকে না জানিয়ে চুপিসারে নিহত শ্রমিকের মরদেহ দাফনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে জানতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাতকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;