মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে সীতাকুণ্ডের তারেকের ভাগ্য বদল

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে সীতাকুণ্ডের তারেকের ভাগ্য বদল

এম কে মনির, সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ।। 

সীতাকুন্ড উপজেলার পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডস্থ দঃ ইদিলপুর গ্রামের যুবক মোঃ তারেকুল ইসলাম দীর্ঘদিন মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে আসছে । আর তাঁর ভাগ্য বদলে গেছে এ ছাগল পালন করেই।

একটি ছাগল ছানা থেকে শুরু হলেও তারেকের খামারে এখন বিভিন্ন জাতের আঠারোটি  ছাগল রয়েছে। তারেকের চোখেমুখে এখন  স্বপ্নরা খেলা করছে।ভবিষ্যতে  ছাগলের খামারকে বৃহদাকারে রূপ ও ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর তারেক।আর সেই লক্ষ্যেই দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শিক্ষিত ও দক্ষ যুবক তারেকুল ইসলাম। 

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন দেখতে তারেকুল ইসলামের খামারে গেলে কথা হয় তারেকের সাথে। ২০০৫ সালে এসএসসি পাশ করে মেকানিক্যাল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তারেক।এরপর রাজধানী ঢাকাতে স্বনামধন্য একটি কোম্পানিতে ১২-১৩ বছর চাকরী করেন তারেক।এক সময় অন্যের অধীনস্থ থাকা,মানসিক চাপ,পরিবার থেকে দূরে থাকাসহ নানা কারণে চাকরীর প্রতি অনীহা চলে আসে তারেকের।তারেক ভাবতে থাকে অন্যের অধীনে না থেকে  নিজে কিছু করার।কিভাবে নিজে একটি কর্মসংস্থান সৃস্টি করা যায় সেই ভাবনা তারেককে ব্যস্ত করে তোলে।কোলাহলময় ঢাকা শহর ছেড়ে তারেক ফিরে আসে নিজ গ্রাম সীতাকুণ্ড পৌরসভার দঃইদিলপুরে।

২০১৯ সালের শেষের দিকে  একটিমাত্র ছাগল ছানা পালন শুরু করে তারেক।পরে আরো তিনটি ছাগল সংযোজন করে।ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তারেকের ছাগলের খামার।একসময় বসতঘরের পাশেই মাচা পদ্ধতিতে সুন্দর ও পরিবেশসম্মত একটি ছাগলের ঘর তৈরি করেন সে।দিনরাত ছাগলের পিছনে সময় পার করে।বছর পার না হতেই সফলতা ধরা দেয় তারেকের দুয়ারে।বংশ বিস্তারের মাধ্যমে তারেকের খামারে এখন আঠারোটি ছাগল।যার মধ্যে রয়েছে দেশী ব্লাক বেঙ্গল, যমুনা পারি,তোতা পরি ক্রসসহ বিভিন্ন দেশীয় ও বিদেশী জাতের ছাগল।খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছাগলগুলোকে খেতে দেন তারেক।ছাগলকে অতি যত্ন সহকারে কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর আর তারেকের মুখের হাসিই বলে দেয় তারেক একজন দক্ষ ও সফল খামারী।

ছাগলকে কি খাওয়ানো হয় জানতে চাইলে তারেক বলেন,গমের ভূষি,ভূট্টার ছোলা,কাঁঠাল গাছের পাতা,কাঁচা ঘাস ইত্যাদি। এছাড়াও তারেক ছাগলকে হৃষ্টপুষ্ট করণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ভিটামিন খাওয়ান।শীতকালে সাধারণত ছাগলের রোগ বালাই বেশি হয়।যেমন সর্দি,কাশি,ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগ।এসব রোগের মধ্যে সর্দির জন্য ব্রঙ্কাভেট, ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের জন্য ওরাকেল,শক্তিবৃদ্ধির জন্য রিমোজিন,ডায়রিয়ার জন্য ডায়াজেন্ট পাওডার প্রয়োগ করেন তারেক। তবে ছাগলের অন্যতম একটি অসুখ হচ্ছে পিপিয়া।যেটি ছাগলকে শারীরিকভাবে খুব দুর্বল করে দেয়। এ রোগ থেকে ছাগলকে বাঁচাতে তারেক ছাগল জন্মের ছয় মাসের মধ্যেই পিপিয়া রোগের টিকা দেয় যা প্রতি ছয় মাস অন্তর একবার দিতে হয়।

চাকরী জীবনকে বিদায় জানিয়ে আত্নকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সীতাকুণ্ডের এই যুবক বর্তমানে স্বাবলম্বী হতে চলেছে। ছাগল পালন করে নিজের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছে তারেক।তারেক এখন সমাজের বেকার যুবকদের জন্য আইডল।কিভাবে কঠিন খাটুনির বিনিময়ে সফলতাকে বাগে আনতে হয় সেই পন্থা তারেক দেখিয়ে দিয়েছে।আর তা তারেকের পরিশ্রমের ফসল বলে মনে করছেন সে।

তবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ থেকে বিনামূল্যে ছাগলের চিকিৎসা সুবিধা পেলে  আরো বেশি সফল হয়ে ওঠবে বলে মনে করেন তারেক।কেননা ছাগলের চিকিৎসা বাবদ মাসিক ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হয় তার খামারে।

এ বিষয়ে তারেকুল ইসলাম বলেন,২০১৯ সালে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে  ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের মাচা পদ্ধতির ঘরটি করেছি।১ টি ছাগল থেকে এখন আমার খামারে ১৮ টি ছাগল।গেল কোরবানিতে ৩-৪ টি খাসি ছাগল বিক্রি করেছি।ছাগল পালন করে আমি স্বাবলম্বী । দৈনিক ছাগলের খাবার বাবদ ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়। দেশী ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বছরে দু'বার বাচ্চা দেয়।প্রথম বার ১-২ ট,দ্বিতীয় বার ৩ টি বাচ্চাও দেয় দেশী ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল। 

এসময় তারেক আরো বলেন, রোগবালই থেকে সতর্ক থাকলে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হওয়া অতিব সহজ।এর জন্য প্রয়োজন ইচ্ছা,সাহস ও পরিশ্রম। ভবিষ্যৎে ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন সফল এই তরুণ।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃশাহজালাল মোঃইউনূস বলেন,ছাগল পালন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা তারেকের মতো যুবকদের উপজেলা প্রাণী সম্পদ  অধিদপ্তর সবসময় উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। তারেক যদি কোন ঋণ নিতে চাই তাহলে আমরা তাকে প্রত্যয়ন পত্র দিতে পারি।ছাগল পালনের বিষয়ে যেকোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা করবো।তারেকের ছাগল পালনে যেকোন পরামর্শ ও চিকিৎসা সহযোগিতা দিতে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বদ্ধ পরিকর।অগ্রগামী খামারিদের সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।