সংঘাত নয়, আমরা সমঝোতায় বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী

সংঘাত নয়, আমরা সমঝোতায় বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী
সংঘাত নয়, আমরা সমঝোতায় বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী

আলমগীর হোসেন, কক্সবাজার ।।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  সংঘাতে নয় আমরা সমঝোতায় বিশ্বাসী। সেভাবে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যুদ্ধে কোন সমাধান নাই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তা আমরা দেখেছি।

তিনি বলেন , অবাধ বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্রকে নিরাপদ রাখতে হবে। এজন্য সমুদ্রে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সাগর উপকূলীয় দেশগুলো জলসীমায় একইসূত্রে গাঁথা। এছাড়াও সকল দেশ সীমানায় বিভক্ত হলেও বিশাল জলরাশি প্রকৃতপক্ষে আমাদের একত্রিত করেছে। তাই বিপুল সম্ভাবনার এই সমুদ্রকে কাজে লাগাতে হবে।

প্রথমবারের মতো বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে  বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আয়োজনে কক্সবাজারের ইনানি সৈকতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর)-২০২২’ এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

উল্লেখ্য, ভারত, মিয়ানমার ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ২৮টি দেশের নৌ বাহিনীর প্রধান ও কর্মকর্তা-সদস্যদের অংশগ্রহণে আইএফআর ২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর ঐতিহ্যবাহী ‘শিপস্ বেল’ বাজিয়ে এই অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।

এ সময় পৃথিবীর দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতে মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রদর্শনী উপভোগ করে উচ্ছ্বাসিত হন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধান অতিথির ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমুদ্রের গবেষণার পাশাপাশি নৌবাহিনীরও আধুনিকায়ন করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে না। তৈরি করা হচ্ছে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি, সমুদ্রসীমা এবং ছিটমহল- সবই অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমাধান করেছি।

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। ইউক্রেন-রাশিয়ার এই পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বকে আমি সেটা বলেছি। কেননা, যে কোন সমস্যা থাকলে আলোচনা করতে হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান সম্ভব।
তিনি বলেন, আমাদের নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও আমরা শান্তিপূর্ণ নীতিতে চলছি। সংঘাত নয়, যেকোনো বিষয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পারে, এটাই আজ প্রমাণিত। আমরা পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সোনালী বালুময় একটি দীর্ঘ সৈকত।বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনার দেশ। বিভিন্ন দেশের নৌ বাহিনীকে নিয়ে আন্তর্জাতিক এমন একটি ‘আইএফআর’ আয়োজন করায় নৌবাহিনীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই- আলম চৌধুরী লিটন, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একাধিক সংসদ সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সামরিক কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে কক্সবাজার ইনানি সমুদ্র সৈকতে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে মনোমুগ্ধকর নানা প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়। একদিকে সাগরের নীল জলরাশির অবারিত ঢেউ। অন্যদিকে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে ইনানিতে বর্ণাঢ্য আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করতেই শুরু হয় আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর) -২০২২ এর একের পর এক পরিবেশনা।

বিশ্বের মোট ২৮টি দেশের নৌবাহিনীর প্রধান/উচ্চপদস্থ নৌ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ বিশ্বের ৭টি দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট এবং হেলিকপ্টার আইএফআর এ অংশগ্রহণ করে। তিন দিনব্যাপী চলমান এই অনুষ্ঠানটি গত ৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া পররাষ্ট্র মূলনীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারোও সাথে বৈরিতা নয়’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আইএফআর ২০২২ এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধুত্ব’। সামুদ্রিক জাতি সত্ত্বার এই মিলনমেলায় অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধিতে ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও এমন অনুষ্ঠান আয়োজন বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। সর্বোপরি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সকলের সাথে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে আলোচ্য আইএফআর ২০২২ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আগত বিভিন্ন দেশের নৌ-সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস কর্তৃক সমুদ্রে একটি বিশেষ মহড়া প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সম্মানে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হয়। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্মৃতি অবলম্বনে নির্মিত চিত্রপ্রদর্শনী ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ অবলোকন করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী আইএফআর ২০২২ উপলক্ষে নির্মিত অত্যাধুনিক কজওয়ে ও জেটি উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী জেটিতে অবস্থানকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ আগত বন্ধুপ্রতীম দেশসমূহের নৌবাহিনীর জাহাজ, উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার এবং বিশেষায়িত বোটের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। ওই সময়ে জাহাজসমূহ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। 

অংশগ্রহণকারী ২৮টি দেশ:
আইএফআর ২০২২ এ অংশগ্রহণকারী ২৮টি দেশ অংশ গ্রহণ করে। রাষ্ট্রগুলো হলো- বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, মিশর, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নাইজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, প্যালেস্টাইন, সুদান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এর নৌবাহিনী প্রধান/উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;