সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে,সীতাকুণ্ডের এক হাসপাতালেই সপ্তাহে ৪১ রোগী ভর্তি

সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে,সীতাকুণ্ডের এক হাসপাতালেই সপ্তাহে ৪১ রোগী ভর্তি
সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে,সীতাকুণ্ডের এক হাসপাতালেই সপ্তাহে ৪১ রোগী ভর্তি

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ সলিমপুর এলাকার শালেহ আহম্মদ । বুধবার সকাল থেকে শরীরে প্রচণ্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। দুপুরের পর তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে যায়। সেই সাথে পেটব্যথা ও বমি হচ্ছিল । স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষার পর তাঁর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এরপর তিনি স্থানীয় বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন।

শুধু শালেহ আহম্মদ না, সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ৪১ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার ১ দিনেই ভর্তি ৫ ডেঙ্গু রোগী।

এবার হাসপাতালটিতে সব বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু রোগী ভর্তি হলেও ২০-৬৫ বছরের রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে রোগীদের ডেঙ্গুর ধরণ এখনও নির্ণয় করা যায়নি। গতবারের তুলনায় এবারের ডেঙ্গুর ধরণ কিছুটা আলাদা। ভর্তি হওয়া রোগীদের রক্তচাপ ও রক্তের অনুচক্রিকাও (প্লাটিলেট) কিছুটা কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে তারা সবাই সুস্থ আছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৯৯  ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে শহর ও গ্রামাঞ্চলের রোগী রয়েছে। হাসপাতালের ভৌগোলিক অবস্থান সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে বলে এ উপজেলার ভাটিয়ারী, কুমিরা, পাক্কা রাস্তার মাথা, সলিমপুরের বাসিন্দা রোগীর সংখ্যা একটু বেশি।

হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে দেখা যায়, নির্দিষ্ট শয্যার পাশাপাশি হাসপাতালের অন্য ইউনিটেও ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ভর্তিকৃত রোগীর অধিকাংশ শয্যায় মশারি টাঙানো নেই। চিকিৎসকেরা মশারি টানাতে বললেও অনীহা রোগীদের।

চিকিৎসা নিতে আসা সীতাকুণ্ডের কুমিরার জাহানারা (৩৫) বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে তার জ্বর, পেটব্যথা ও বমি হচ্ছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হলে সে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে চিকিৎসার পর বর্তমানে জ্বর থাকলেও বমি ও পেটব্যথা অনেকটাই কমেছে।

 

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, আমরা নিয়মিত মানুষকে সচেতন করতে উঠান বৈঠক, সভা-সেমিনার করে যাচ্ছি। প্রতি সপ্তাহে ৩-৪ টি সভা করা হচ্ছে। আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, পরিদর্শক সকলেই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে কোন রোগী ভর্তি হয়নি। এমনিতে যে ক'জন ডেঙ্গু রোগী আসছেন তাঁরা আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সীতাকুণ্ডে ডেঙ্গু বেশি ব্যাপারটা এমন নয়। শহরে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীরা গ্রামে চলে আসছেন। আর এসে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঠিকানা দেওয়া হচ্ছে গ্রামের। ফলে মনে হচ্ছে সীতাকুণ্ডে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব বেশি। শহর থেকে গ্রামে চলে আসায় ইদানিং ডেঙ্গু বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

বিআইটিআইডি হাসপাতালে গত আড়াই বছর ধরে ডেঙ্গু ও করোনা নিয়ে কাজ করছেন হাসপাতালটির সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ভর্তি হওয়া সব রোগীই সুস্থ আছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে বেশ ভালোভাবেই। কোন ব্যত্যয় ঘটছে না। ওষুধ, রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে সরকারি সব ধরণের সাপোর্ট আছে। দ্বিতীয়ত রোগীদের রক্তচাপ ও রক্তের অনুচক্রিকা (প্লাটিলেট) কম পাওয়া যাচ্ছে। এটা ডেঙ্গুর নতুন ধরণ। তবে এর কারণে মৃত্যুঝুঁকি নেই। কোনো রোগীকে আইসিইউতেও পাঠানোর প্রয়োজন হয় না। তবে কেন রোগীর রক্তচাপ কম পাওয়া যাচ্ছে বা প্লাটিলেট কম পাওয়া যাচ্ছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটা নিশ্চিত হতে বা কোন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তা জানতে জেনেটিক এ্যানালাইসিস করতে হয়। এজন্য আমরা নমুনা সংগ্রহ করে সেই নমুনা ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠিয়ে দিচ্ছি। রিপোর্ট আসার পর আমরা জানতে পারব ডেঙ্গুর ধরণ কী।

বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক আরও বলেন, আমরা ২ ঘন্টায় রোগীর এনএস ওয়ান এন্টিজেন ও ৬ ঘন্টায় এন্টি ডেঙ্গু আইজিএম পরীক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা সহজেই জানতে পারছি রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত কিনা? এরপর চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। ঢাকা থেকে রিপোর্ট পেতে সময় লাগলেও চিকিৎসায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। সেটির সাথে চিকিৎসার কোনো সম্পর্ক নেই। সব ডেঙ্গুর চিকিৎসা একই।

মামুনুর রশিদ আরও বলেন, সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশে ডেঙ্গুর চারটি উপসর্গই আছে। এটি প্রতিরোধ করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তাহলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;