আমরা মেটাতে পেরেছি মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো :সৈয়দ হাসান ইমাম

আমরা মেটাতে পেরেছি মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো :সৈয়দ হাসান ইমাম

অভিনয়ের চেয়েও আমার কাছে মুখ্য হলো মানুষের সঙ্গে মানুষের জন্য বেঁচে থাকা। যদি মানুষের কাজেই না লাগতে পারি, যদি মানুষের মুক্তির মিছিলেই না হাঁটি, যদি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অংশ না নেই তবে অভিনয় শিল্পীর জীবনও তো আমার পূর্ণ হবে না। কারণ প্রতিটি শিল্পীরই একটি রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে হয় বলে আমি মনে করি। এ কারণেই আমি অভিনয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।

ভারত-পাকিস্তান দুই ভাগ হলো। ১৯৫৭ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরলাম। এরপর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হলাম। ১৯৬৯-এর গণআন্দোলন এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করি। ইংরেজ আমলে মানুষের গায়ে জামা ছিল না। তিনবেলা খেতে পারত না, পায়ে জুতা ছিল না।

বাংলাদেশ হওয়ার পর বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পরাধীন দেশেও একটা সমাজ ছিল। সে সমাজে ঐতিহ্য ছিল ধর্মে ধর্মে, জাতিতে জাতিতে মেলবন্ধন ছিল। ব্রিটিশ আমলে এই সুন্দর মেলবন্ধনটা নষ্ট করে দেওয়া হয়। এটা আমরা এখনও উদ্ধার করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে খালি হাতে অস্ত্রের বিপরীতে যুদ্ধ করে। স্বাধীনতার চারটি মূলনীতির একটিÑ অর্থনৈতিক দিকটি আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। মানুষের উন্নতি হয়েছে। নিম্নবিত্তরা এখন তিনবেলা খেতে পারে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করতে এবং চিকিৎসাসেবা দিতে পারে। এই প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো আমরা মেটাতে পেরেছি।

আমরা আশা করি, বাংলাদেশে একদিন আমরা সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব। সবাই সমান অধিকার পাবে। জীবনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারছি। কিন্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চাহিদাটাই কিন্তু একমাত্র সব নয়। উচ্চশিক্ষা, মনোজগতের পরিবর্তন এবং সমাজে মানুষে মানুষে সমান ভাগ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আগে সমাজের একটা শাসন ছিল সেই সমাজটাকে আবার ফিরিয়ে আনা দরকার। এসব কাজ বাকি আছে। নতুন প্রজন্ম নিশ্চয়ই এ কাজ সম্পন্ন করবে। আমাদের স্বাধীনতা শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা হলে হবে না। আর্থিক স্বাধীনতা পেলেও হবে না। মনোজগতের চিন্তার স্বাধীনতার পেতে হবে। আর মানুষের যার যে ক্ষেত্রে সম্ভাবনা আছে সেখানে তার কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে। এটাও স্বাধীনতা। আমি বাধ্য হয়ে কেরানিগিরি করি, কিন্তু আমার শখ গানের দিকে। তবে গানকে আমি পেশা হিসেবে নিতে পারব না। কয়েকজন পারলেও বাকিরা পারবে না। কেউ কেউ গান ও সংস্কৃতিচর্চা করেও জীবনযাপন করতে পারে। তা দিয়ে বিশ^জগতে হয়তো স্থানও করে নিতে পারবে। তবে প্রতিভার অভাব আমাদের নেই। বাঙালি অনেক সৌভাগ্যবান জাতি। এত রক্তের মিশ্রণ থাকা সত্ত্বেও বাঙালির প্রতিভা কিন্তু অসাধারণ। সারা পৃথিবীর মধ্যে আমরা দরিদ্রতম দেশ ছিলাম। সেখান থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি। এটা ভালো কথা। কিন্তু সারা বিশে^র সংস্কৃতির জগতে আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছতে পারিনি। আমরা বিজ্ঞানের জগতে সেভাবে পৌঁছতে পারিনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেন সেই জায়গায় যেতে পারি, যেখানে উন্নত দেশগুলো পৌঁছেছে। তাহলে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারব।

লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব