চট্টগ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট, পানিবন্দী লাখো মানুষ

চট্টগ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট, পানিবন্দী লাখো মানুষ
চট্টগ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট, পানিবন্দী লাখো মানুষ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

অতিবৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তিন দিন ধরে পানিবন্দী। তাঁদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর নিম্নাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে গতকাল রোববার পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এতে ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন পানিবন্দী মানুষ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, চকবাজার, বাকলিয়া ও বহদ্দারহাটে। এসব এলাকায় কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। ভবনের নিচতলা ডুবে যাওয়ায় সেখানে বসবাসরত বহু পরিবার ঠিকমতো রান্না ও খাওয়া দাওয়া করতে পারছে না। পানি ফুটিয়ে খাওয়ারও ব্যবস্থা নেই। এমন অবস্থায় চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দাবি জানালেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের মর্জিনা আক্তার জানান, ১ ছেলে এবং দুই মেয়ে নিয়ে একটি বাসায় থাকেন। তাঁরা সবাই পোশাক কারখানায় কাজ করেন । জলাবদ্ধতার কারণে তিন দিন ধরে তাঁরা বাসায় আটকে পড়েছেন। পানির কারণে বাসায় থাকাও দায়। ঘরের ভেতর কোমরসমান পানি। ওয়াসার পানিই ভরসা তাঁদের।

মর্জিনা আক্তার বলেন, ভাত রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছি না, সেখানে ফুটিয়ে পানি পান করি কীভাবে? ওয়াসার লাইনের পানিই খাচ্ছি। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে খাই। এই এলাকায় সবাই ওয়াসার পানিই খান।

হালিশহরের বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, আমার এক সন্তান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। হালিশহরে সবার ঘরে ঘরে এখন পানিবাহিত রোগ। মূলত পানি ফুটিয়ে খাওয়ার সময় পাই না। সকালে উঠেই কাজে যেতে হয়। রাতে এসে কোনো রকমে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। তবে সন্তানেরা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ওয়াসার পানির পরিবর্তে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছি। 

চট্টগ্রামের বাকলিয়ার বিভিন্ন বাসার নিচতলায় সবার ঘরে পানি। এখানকার মানুষও বিশুদ্ধ পানি পান করার বিষয়ে সচেতন নন। সৈয়দশাহ এলাকার বাসিন্দা পারভীন আক্তার বলেন, প্রতিবছর পানি সরে যাওয়ার পর সন্তানেরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তবে এখন পর্যন্ত সবাই ভালো আছে।

পারভীন আক্তার আরও বলেন, ‘সব সময় ওয়াসার পানিই পান করি। তবে মাঝেমধ্যে পানি ফুটিয়ে পান করি। সেবা সংস্থাগুলো এই দুর্যোগের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করলে পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচা যেত।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ওই রকম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। এ ছাড়া পানি নেমে যাওয়ার পর নতুনভাবে মশার উৎপাত হতে পারে। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, সাধারণত পানি সরে যাওয়ার পর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। জলাবদ্ধতার কারণে সাপের দংশনের রোগী পাচ্ছি। পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে বলে জানান তিনি ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;